অপেক্ষা: বাড়ি ফেরার ভিড়। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলা থেকে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় কোভিড হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের পাঠানোয় রোগীর ভিড় বেড়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ছিল ২০ জন। কোচবিহার থেকে সেখানে ৩২ জনকে পাঠানোর ফলে শনিবারের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত চিকিৎসক, নার্স পাঠাতে হচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর তথা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে। অন্য জেলা থেকে এখনও কেন এখানে রোগী পাঠানো হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দার্জিলিং জেলা প্রশাসন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে সমস্যা জটিল হতে পারে। উত্তরবঙ্গে করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় এই নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠিয়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিঠিতে সুশান্তবাবু এই পরিস্থিতির জন্য কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে এখনও কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো প্রস্তুত না-করাকে দায়ী করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই দুই জেলাকে আগেই পরিকাঠামো তৈরির জন্য বলা হয়েছিল। তা এখনও হয়নি। তাই ফের তাদের দ্রুততার সঙ্গে কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরকে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জিও জানানো হয়েছে। বিশেষ দায়িত্বে থাকা আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই দুই জেলায় কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো করতে বলা হয়েছে। না হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।’’ দুই জেলা প্রশাসনের তরফে অবশ্য তা নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাননি। তাদের একাংশ জানায়, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (সারি) কেন্দ্র করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কোচবিহারের এক স্বাস্থ্য কর্তা জানান, যে রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই মতো কাজ করা হচ্ছে।
বর্তমানে শিলিগুড়ির কোভিড হাসপাতালে অন্য জেলা হিসেবে কোচবিহার ছাড়াও আলিপুরদুয়ার এবং মালদহের রোগীরা রয়েছেন। অন্য জেলা থেকে রোগী পাঠানোয় মাটিগাড়ার কোভিড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরাও এদিন বিশেষ দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে চিঠি দিয়ে উদ্বেগের কথা জানান। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম দিকে সব জায়গায় পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। তখন গোটা উত্তরবঙ্গে মাটিগাড়ার কোভিড হাসপাতালকেই আক্রান্তদের রাখার ঠিকানা করা হয়েছিল। প্রতিটি জেলায় দ্রুত কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে বলেও জানানো হয়। অথচ দু’মাস কেটে গেলেও কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে তা হয়নি। কেন হয়নি, এই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে অন্য জেলা থেকে এখানে রোগী পাঠালে সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে মেডিক্যাল টিম পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক বলেও বিশেষ দায়িত্বে থাকা আধিকারিককে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।
শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য, মাটিগাড়ার বিধায়ক শঙ্কর মালাকাররা আলাদা ভাবে দাবি করেন, সব জেলা থেকে শিলিগুড়িতে রোগী পাঠালে সমস্যা বাড়বে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে দ্রুত কোভিড হাসপাতালের পরিকাঠামো করা হোক। না হলে এই হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপ বাড়বে।