প্রতীকী ছবি।
মহাস্নানের পরম্পরাই ভুঁইয়া বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য। করোনা আবহে জলপাইগুড়ি শহরের উকিল পাড়ার ভুঁইয়া বাড়ির পুজোয় এ বছরে মহাস্নান প্রথায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সাত সমুদ্রের জল এ বছরে আনা হবে না। মহাস্নানের জন্য দীর্ঘ প্রায় ১৭১ বছর ধরেই এই পরিবারের পুজোয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সমুদ্র ও নদীর জল আনার রেওয়াজ রয়েছে। এবছরে এই জল সংগ্রহ করা যায়নি বলে পরিবারের লোকেরা জানান ।
করোনা পরিস্থিতিতে পুজোর কাঠামোরও বদল করতে হয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্য অমিয়কুমার ভৌমিক। ছোট কাঠামোয় ছোট প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। পরিবারের আরও এক সদস্য রঞ্জিতকান্ত ভৌমিক জানান, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই নমঃ নমঃ করে পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। পরিবার সূত্রের খবর, অবিভক্ত বাংলাদেশের ঢাকার মাণিকগঞ্জের রূপসানালী গ্রামে পরিবারের প্রয়াত রজনীকান্ত ভৌমিক পুজোর সূচনা করেছিলেন। বাংলার বারো ভুঁইয়াদের মধ্যে এই পরিবার অন্যতম বলে দাবি পরিবারের। ১৯৩০ সাল থেকে জলপাইগুড়ির উকিলপাড়ার বাড়িতে এই পুজো হচ্ছে। প্রায় পাঁচ পুরুষের এই পুজোয় আজও পরিবারের সকলেই অংশ নেন। পঞ্চমীর দিন থেকে বাড়ির ঠাকুর দালানে পুজো শুরু হয়। দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস শাস্ত্রীয় রীতি মেনেই করা হয় বলে পরিবারের সদস্য সুদীপ্তকান্ত ভৌমিক জানান।
ভুঁইয়া বাড়ির দেবী মূর্তি অতসী ফুলের রঙের। দেবীর বাহন সিংহের রঙ সাদা। দেবীর বাঁদিকে গণেশ এবং ডানদিকে কার্তিক। নবপত্রিকা অর্থাৎ কলা বউ কার্তিকের পাশেই স্থাপন করা হয়। পরিবারের তরফে সুদীপ্তকান্ত ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির পুজোর ভোগ লুচি আর পায়েস দিয়েই হয়।’’ পরিবারের লোকেরা জানান, পুজোতে পাঁঠা বলির রেওয়াজ ছিল। ১৯৮২ সাল থেকে পাঁঠা বলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাঁঠা বলি বন্ধ হলেও, ভুঁইয়া বাড়ির পুজোয় আজও চালকুমড়ো, আখ, কলা, আপেল, শসা সহ ৯ ধরনের ফলের বলি চালু আছে। এ ছাড়াও নবমীর দিন শত্রু বলির প্রথা রয়েছে। কলার থোরের উপর চালের গুঁড়ো দিয়ে শত্রু তৈরি করে বলি দেওয়া হয়।