Coronavirus in North Bengal

‘দাদা, দাঁড়ান!’ শুনেই দৌড়

রাস্তায় হেঁটে চলেছেন পিপিএ পরা স্বাস্থ্যকর্মীরা। উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসছেন লাল টি-শার্ট পরা যুবক। মুখে মাস্ক নেই। তাঁকে দাঁড় করালেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী ওই যুবককে ঘিরে ফেলে টেস্টের কিট বের করতে শুরু করেছেন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০৩:২০
Share:

ঊর্ধ্বশ্বাসে: রাস্তায় বেরোলেও মুখে ছিল না মাস্ক। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের এগিয়ে আসতে দেখেই দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন যুবক।

ভিড় বাজারে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে রাস্তার পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন পিপিই পরা স্বাস্থ্যকর্মীরা। মাথা থেকে পা পর্যন্ত দুধ সাদা পিপিই স্যুটে তাঁদের মহাকাশচারীদের মতো দেখাচ্ছে! দেখতে জটলাও হল। সেই জটলা থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা বেছে নিলেন একজনকে, যিনি মাস্ক পরেননি। তাঁর করোনা টেস্ট করা হবে জানানো হল। সেই ব্যক্তি বললেন, “করবেন তো করুন, আমি ভয় পাই নাকি!” টেস্ট কিট বের করতে কিছুটা সময় লাগছে। আশেপাশের জটলা বাড়ছে। ধোপদুরস্ত সেই ব্যক্তি কোনও কথা বলছেন না। হঠাৎ দেখা গেল তিনি গুটিগুটি বাঁ দিকে সরছেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কিছুটা সরে গিয়ে হনহন করে হাঁটা দিলেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা ডাকছেন, “কী হল, দাদা। আসুন।” কে শোনে কার কথা! দ্রুত ভিড়ে মিশে গেলেন সেই ব্যক্তি।

Advertisement

এমন অভিযান যে হবে, সেটা আগেই জানিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে করোনা মোকাবিলায় ওএসডি সুশান্ত রায়। সেই মতো এ দিন অ্যাম্বুল্যান্স প্রথমে এসে থামে দিনবাজারে।

সেখানে কালীবাড়ির সামনে রাস্তায় হেঁটে চলেছেন পিপিএ পরা স্বাস্থ্যকর্মীরা। উল্টো দিক থেকে হেঁটে আসছেন লাল টি-শার্ট পরা যুবক। মুখে মাস্ক নেই। তাঁকে দাঁড় করালেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী ওই যুবককে ঘিরে ফেলে টেস্টের কিট বের করতে শুরু করেছেন। যুবক বললেন, “কেয়া হ্যায়!” স্বাস্থ্যকর্মীরা জানালেন তাঁর টেস্ট হবে। শুনেই এক স্বাস্থ্যকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পেছন ফিরে দৌড়। ভিড় রাস্তায় যুবক ছুটছেন, পিছনে পিপিই পরে ছুটছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। শেষে একটি কানা গলিতে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়েন যুবক। তাঁর টেস্ট হয় এবং তিনি নেগেটিভ হন। যুবক বলেন, “বানারহাট থেকে এসেছিলাম। টেস্ট করা হবে শুনে কেন জানি না, বুকটা কেঁপে উঠেছিল। তাই দৌড়েছিলাম।”

Advertisement

শেষ পর্যন্ত তাঁকে ধরে এনে করানো হল অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। মঙ্গলবার, জলপাইগুড়ি শহরে। ছবি: সন্দীপ পাল

টোটো চেপে মাস্ক ছাড়া যাচ্ছিলেন এক মধ্যবয়সী। টোটো দাঁড় করিয়ে জানানো হয়, তাঁর টেস্ট করা হবে। সঙ্গে সঙ্গে এক লাফ দিয়ে রাস্তার অন্য পারে গিয়ে একটি মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে সোজা পগার পার।

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এ দিন ২৩ জনের পরীক্ষায় একজনের সংক্রমণ মিলেছে। জলপাইগুড়ি সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক ২ মৃদুল ঘোষ জানিয়েছেন, এমন ভাবে শহরের রাস্তায় পরীক্ষা চলবে। তবে টেস্টের জেরে দিনবাজার ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, জোর করে টেস্টে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, বাজারে ফের মন্দা দেখা যাবে।

জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement