প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তে রেকর্ড ভাঙল মালদহ। একদিনে নতুন করে ৪৪ জনের লালারসের রিপোর্ট পজ়িটিভ হল। এর মধ্যে ইংরেজবাজার ব্লকে ১৭ ও গাজলে ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বাকিরা অন্য ব্লকে। বৃহস্পতিবার রাতে মালদহ মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাবে একসঙ্গে এই বিপুল পরিমাণ বাসিন্দার লালারসের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এর আগে মে একসঙ্গে ৩১ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছিল জেলায়।
আরও, নতুন করে ৪৪ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা হল ২০১ জন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, যেখানে জেলায় প্রথম ১০০ জন আক্রান্ত হতে সময় লেগেছিল ৩১ দিন, সেখানে পরের এই ১০০ হতে সময় নিল মাত্র ১২ দিন। এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, ‘‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকরা বেশি সংখ্যায় ফিরতেই জেলায় আক্রান্ত লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে।’’ জানা গিয়েছে, নতুন আক্রান্তরা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে একজন মহিলা রয়েছেন। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাত সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাঁরা কেউ বাসে, ট্রাকে বা কেউ ট্রেনে ফিরেছিলেন।
এ দিকে, আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই লালারস সংগ্রহ হয়েছিল অন্তত ২০ মে বা তার পর। অভিযোগ, মালদহের ভাইরোলজি ল্যাবে লালারসের নমুনার ব্যাকলগের জেরে এত দিন পরে সেই রিপোর্ট আসে। ফলে এই শ্রমিকদের সকলকেই সরকারি কোয়রান্টিনে ১৪ দিন রেখে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লালারস সংগ্রহের দশ দিন পার হয়ে যাওয়ায় আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনে শুক্রবার হাতে গোনা কয়েক জন আক্রান্তকে কোভিড হাসপাতাল বা ব্লকগুলির কোভিড কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করানো হয়েছে। বেশির ভাগ আক্রান্তকেই হোম কোয়রান্টিনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চার-পাঁচ দিন ধরে জেলায় সে ভাবে করোনা পজ়িটিভ রোগীর সন্ধান মিলছিল না। বুধবারও কোনও রোগীর সন্ধান মেলেনি ভাইরোলজি ল্যাবে।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একলাফে রেকর্ড সংখ্যক রিপোর্ট পজ়িটিভ এল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ৪৪ জনের মধ্যে ১৭ জন ইংরেজবাজার ব্লকের এবং সকলেই বিনোদপুর পঞ্চায়েতের সাট্টারি গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ১৭ জনের কেউ ফিরেছেন মহারাষ্ট্র, কেউ দিল্লি বা কেউ হরিয়ানা থেকে। গত ২০-২৮ মের মধ্যে তাঁরা জেলায় ফিরেছিলেন ট্রাকে বা বাসে করে। গৌড়কন্যা বাস টার্মিনাসে তাঁদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাঁরা সকলেই নির্মাণ শ্রমিক। সাট্টারি হাই স্কুলে ১৪ দিন কোয়রান্টিনে ছিলেন। এ দিকে আক্রান্ত ১৫ জন গাজলের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১২ জনই শাহজাদপুর পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরাও কেউ মহারাষ্ট্র, কেউ দিল্লি থেকে আসেন। ফেরার পরে তাঁদেরও লক্ষ্মীপুর হাই স্কুলে কোয়রান্টিনে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁদের লালারসের নমুনা নেওয়া হয়। নমুনা নেওয়ার ১৩ দিন পরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে।
বাকি আক্রান্তরা মানিকচক ব্লকের ৩ জন, রতুয়া ২ ব্লকের ২ জন এবং একজন করে চাঁচল ১, চাঁচল ২, হরিশ্চন্দ্রপুর ২, হবিবপুর, কালিয়াচক ১, রতুয়া ১ ও কালিয়াচক ৩ ব্লকের। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নতুন আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই লালারস নেওয়ার পরে ১০ দিন পার হয়ে গিয়েছে। তাই আইসিএমআর-এর গাইডলাইন অনুযায়ী তাঁদের হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কয়েক জনকে কোভিড হাসপাতাল ও কোভিড কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। জেলার ভাইরোলজি ল্যাবে ব্যাকলগ কমানোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’’