ফাইল চিত্র
কলকাতা থেকে ঘুরতে এসেছেন অরিত্র বসু। বিদেশিদের জন্য দরজা বন্ধ হওয়ার পরেও তাঁর এবং সহযাত্রী পর্যটকদের সিকিমে ঢুকতে কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সোমবার কানাঘুষোয় একটা খবর পেয়ে তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা পড়েছেন চিন্তায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সিকিম এবার দেশীয় পর্যটকদের ক্ষেত্রেও প্রবেশে রাশ টানল। সোমবার গ্যাংটকে মুখ্যমন্ত্রী প্রেমসিংহ তামাংয়ের উপস্থিতিতে সব মন্ত্রী, বিধায়ক, রাজ্য প্রশাসনের উচ্চপদস্ত কর্তারা এক বৈঠকে বসেন। সেখানে হাজির ছিলেন পর্যটন, পরিবহণ, হোটেল এবং বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও।
বৈঠকের পর সরকারি সূত্রে জানানো হয়, বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদেরও নথিপত্র ভাল ভাবে পরীক্ষা করে ঢোকানো হবে। এর ফলে অনেক গরিব, নিরক্ষর শ্রমিক সমস্যায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেকেরই নথিপত্র ঠিক মতো নেই। তাঁরা কাগজ দেখাবেন কী করে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। একই সঙ্গে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, সিকিমে এখনও করোনা আক্রান্ত একজন রোগীরও হদিস মেলেনি।
নিয়ন্ত্রণ অবশ্য শুধু পর্যটকদের উপরেই চাপানো হয়নি। সিনেমা হল, ক্যাসিনো, পাব, ডিস্কো, জিম, হোটেল, মেলা, উৎসব, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ও ১৫ এপ্রিল অবধি বন্ধ থাকবে বলে সরকার ঘোষণা করেছে। সিকিমবাসীর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, ‘‘সিকিমের ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যেই থাকুন। সিকিমবাসীর বাইরের রাজ্যে অত্যন্ত জরুরি দরকার ছাড়া যাতায়াতের প্রয়োজন নেই।’’ আর মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জ্যাকব খালিং বলেছেন, ‘‘রাজ্যভিত্তিক স্পেশাল টাস্কফোর্স তৈরি জরুরি হয়েছে। সরকার ভাবনা শুরু করেছে।’’
কিন্তু বাইরে থেকে ঘুরতে আসা অরিত্রদের কী হবে? এই নিয়ে সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত, আপাতত তাঁদের ভয় নেই। ঘুরে-ফিরে নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা সিকিম থেকে বেরিয়ে নিজের রাজ্যে ফিরে যেতেই পারেন। তবে মাঝে যদি নির্দেশে কোনও বদল হয়, তা হলে অন্য কথা।
মার্চের প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণ শুরু হতেই সিকিম সরকার বিদেশি পর্যটকদের উপর রাশ টানে। এর পরেই মেল্লি, রংপো চেকপোস্টে কড়াকড়ি শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যেই লাচেন, লাচুং বন্ধ করে দেওয়া হয় পর্যটকদের জন্য। সিকিম প্রশাসনের এক কর্তা জানান, শীতপ্রবণ এলাকায় যে কোনও ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় সংক্রমণ শুরু হলে সামাল দেওয়া মুশকিল। এ সব ভেবেই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে।
পর্যটক ছাড়াও শিলিগুড়ি হয়ে বহু মানুষ নিয়মিত কাজকর্মে সিকিমে যান। তাঁদের কোনও সময়সীমা না দেওয়া হলেও আজ, মঙ্গলবার থেকে হোটেল, লজ, অতিথিশালা বন্ধ হবে বলে প্রচার শুরু করে হয়েছে। তাই তাঁদের সিকিম ছেড়ে নেমে আসা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। শিলিগুড়ির বহু ব্যবসায়ী সিকিমে ব্যবসা করেন। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, সিকিম থেকে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গাড়ি নিয়ে স্ক্রিনিং করিয়ে কাজ সেরে দিনের দিনে ফেরা ছাড়া আর উপায় নেই।
সিকিম পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মেল্লি এবং রংপো চেকপোস্টে কড়াকড়ি বাড়ানো হচ্ছে। সিকিমে কোনও কাজে এলে, নির্দিষ্ট সংস্থার নথিপত্র সঙ্গে আনতে হবে।