কোচবিহার রাজবাড়ি —নিজস্ব চিত্র।
বয়সের বাধা উপেক্ষা করে জয়পুর থেকে কোচবিহারে চলে আসতেন গায়ত্রী দেবী। ঘুরে বেড়াতেন শৈশবের স্মৃতিমাখা দ্বিতল প্রাসাদের বারান্দায়, রেনেশাঁ স্থাপত্যের দরবার হলে কিংবা বিলিতি কায়দার বিলিয়ার্ড ঘরে। তবে, সমকালীন রাজনীতি-আবর্তের অন্যতম কেন্দ্র কোচবিহার রাজবাড়ির রাজকন্যা-রাজমাতা গায়ত্রী দেবী কালক্রমে রাজবাড়ি থেকে খানিক দূরে থাকলেও রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেননি। তাই হয়তো জয়পুর লোকসভা আসন থেকে নির্বাচনে লড়েছিলেন। সেখানে রেকর্ড ভোটে জয়ের সুবাদে তাঁর নাম ভাস্বর হয়ে রয়েছে দেশীয় রাজনীতির ইতিহাসে।
আজও রাজনগরের সেই মহীয়সীর প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আসে উত্তরের ইতিহাস চর্চায়। ভোটের ভেঁপু বাজলে তো কথাই নেই। গায়ত্রী দেবী, রাজবাড়ি, রাজনীতির অনুষঙ্গ ধরা দেয় কোচবিহারের নির্বাচনী আড্ডায়-আলোচনায়। এমজেএন স্টেডিয়াম লাগোয়া চায়ের আড্ডায় যেমন চিত্রশিল্পী শ্রীহরি দত্ত বলছেন, ‘‘গায়ত্রী দেবী তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁকে ভোটে লড়ার জন্য একটি রাজনৈতিক দল প্রস্তাবও দিয়েছিল বলে শুনেছি।’’ শিক্ষক নিলাদ্রী বিশ্বাসের কথায়, ‘‘রাজবাড়ি ছাড়া কোচবিহারে ভোট হয় না। কারণ, মানুষ এখানেও আজও রাজবাড়ির সঙ্গে আবেগের বাঁধনে জড়িয়ে।’’
এই যেমন ক’দিন আগেই রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে বসেছিল সাংস্কৃতিক আসর। কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের উদ্যোগে। অনুষ্ঠানের কারণে ঐতিহ্যমণ্ডিত রাজবাড়ির পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কায় সরব হয়েছিলেন কেউ কেউ। আবার বাকিদের যুক্তি ছিল— কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে অনুষ্ঠান হতে পারলে কোচবিহারের রাজবাড়িতে নয় কেন? এই ভাবেই রাজবাড়ি কেন্দ্রবিন্দুতে কোচবিহারের নিত্যদিনের চর্যায়।
সেই অনুষ্ঠানের রেশ কাটতে না কাটতেই একটি ভিডিয়ো ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। তার কেন্দ্রেও রাজবাড়ি। তৃণমূল জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘উৎসবে রাজবাড়ির জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয়েছে। মাঠ সাফাইয়ের নামে প্রহসন করেছে বিজেপি।’’ বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক বলেন, ‘‘ওই উৎসবের মাধ্যমে কোচবিহারের রাজবাড়িকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ আদতে, নির্দিষ্ট কোনও ঘটনা বা কোনও ভিডিয়ো ক্লিপ নয়, কোচবিহারের রাজবাড়ি নিজেই এক আবেগের ঐতিহাসিক ভরকেন্দ্র। আর সেই কারণেই তা বছরভর এবং প্রতি নির্বাচনেও তৈরি করে আলাদা আবহ। কোনও না কোনও ভাবে উঠে আসে রাজবাড়ির প্রসঙ্গ।
রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র— কালপ্রবাহে বদলেছে অনেক কিছুই। লোকসভা, বিধানসভা ভোটের পর লাল, সবুজ, গেরুয়া— কতবার কত রঙের আবিরে রঙিন হয়েছে তোর্সাপাড়ের এই শহর। অলক্ষ্যে যেন এই সব ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রেখে চলেছে ১৮৮৭ সালে বাকিংহাম প্যালেসের আদলে নির্মিত কোচবিহার রাজবাড়ি।