দেওয়াল লিখন তৃণমূলের। — নিজস্ব চিত্র
দেওয়াল লিখনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে কোথাও। কোথাও শুরু হয়ে গিয়েছে পথসভার তোড়জোড়। কোচবিহার আসনে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণার দু’দিনের মাথায় নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল ও বিরোধী বামেরা জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছে। তবে বিজেপি ও কংগ্রেস এখনও নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি। কাকে প্রার্থী করা যায় তা নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসে বিজেপির কোচবিহার জেলা কমিটি। এই বৈঠকেই কয়েকটি নাম বেছে নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এখান থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “জেলা কমিটিতে প্রস্তাব নিয়ে বেশ কয়েকটি নাম দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।” তিনি জানান, দলীয় কর্মীরা ইতিমধ্যেই দলের হয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে। ছোট ছোট সভা শুরু হয়ে গিয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির তরফে দলের নেতা ব্রজগোবিন্দ বর্মন, মালতী রাভা এবং হেমচন্দ্র বর্মনের নাম প্রস্তাব করে পাঠানো হয়েছে। কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা কমিটিও ইতিমধ্যেই তিন জনের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছে। ওই তালিকায় নাম রয়েছে দলের নেতা রবিন রায়, তরণী কার্জী এবং প্রিয়া রায় চৌধুরীর। কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “তিনজনের নাম প্রস্তাব আকারে প্রদেশে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।”
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে তৃণমূলের নেতা, কর্মী, সমর্থকরা দলীয় প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায়ের সমর্থনে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। শাসক দলের প্রার্থীর নামে কোচবিহার পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড, কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের ঘুঘুমারিতেও দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে। পার্থপ্রতিমবাবুকেও এ দিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা যায়। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “প্রচার অভিযান শুরু করা হয়েছে। সাধারণ মানুষই নানা জায়গায় আমাদের হয়ে প্রচার শুরু করেছে। দলীয় কর্মসূচি দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে।” বামেদের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ২৩ তারিখ কোচবিহার জেলা বামফ্রন্টের নেতারা আলোচনায় বসবেন। সেখানে তাঁদের কর্মসূচি ঠিক করা হবে। বামেদের কোচবিহার আসনের প্রার্থী নৃপেন রায় বলেন, “সারা দিন বহু মানুষ ফোন করছেন। দেখা করছেন। সবার সঙ্গে কথা বলছি। কর্মসূচি ঠিক হওয়ার পরে টানা প্রচারে নামব।”
এ দিকে গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বংশীবদন বর্মন বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে। বিজেপির অন্দরের খবর, দলেরই একটি অংশ বংশীবাবুকে বিজেপিতে সামিল করানোর ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে উপনির্বাচনে তাকে প্রার্থী করে চমক দেওয়ার ব্যাপারেও তারা তৎপর হয়ে উঠেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক নেতার দাবি, পুরো বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানান হয়েছে। শীঘ্রই ওই ব্যাপারে বংশীবাবুর সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠক হতে পারে। সেটা হলেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হবে।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব চাইলে যে কেউ দলে যোগ দিতে পারেন। বংশীবদনবাবু সত্যিই যোগ দিতে চাইলে তাই আপত্তি হবে বলে মনে হয় না।” বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বংশীবদন বর্মনের এক সময়কার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত প্রাক্তন গ্রেটার নেতা আনোয়ার হোসেন ইতিমধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে দলের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। বংশীবাবুর যোগদানের সম্ভাবনার ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন বলেন, “শুধু বংশীবাবু নয়, আমি চাই কোচবিহারের সমস্ত মানুষই বিজেপিতে সামিল হন। সবটাই রাজ্য নেতৃত্ব চূড়ান্ত করবেন।”
দল সূত্রে খবর, লোকসভার উপনির্বাচনে বংশীবদনকে দলে টেনে গ্রেটারের ভোট পালে টানতে চাইছেন বিজেপি নেতাদের একটি অংশ। তাদের বক্তব্য, অনন্ত মহারাজ গোষ্ঠী ইতিমধ্যে বিজেপিকে সমর্থনের কথা জানিয়েছি। বংশীবাবু বিজেপিতে সামিল হলে গ্রেটারের ওই অংশের ভোটও তারা পাবেন। ফলে সংগঠন যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি তৃণমূলকে এবার কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলাও সম্ভব হবে। বংশীবদনবাবুর সঙ্গে এ দিন অবশ্য মোবাইলে যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি। প্রসঙ্গত, নিউ কোচবিহারে রেল অবরোধ ঘিরে গোলমালে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে মামলা রুজু হয়। সেসব নিয়েও চুলচেলা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন বংশীবাবুকে দলে টানতে উৎসাহী ওই নেতাদের কয়েকজন।