প্লাস্টিক তরজায় শঙ্কিত শিলিগুড়ি

প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে শিলিগুড়িতে দ্রুত তুঙ্গে উঠছে তরজা। এক দিকে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, যাঁর বিরুদ্ধে পরোক্ষে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফেরানোয় মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০২:১২
Share:

প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে শিলিগুড়িতে দ্রুত তুঙ্গে উঠছে তরজা। এক দিকে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, যাঁর বিরুদ্ধে পরোক্ষে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফেরানোয় মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা। অন্য দিকে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, যাঁর দিকে মেয়রের পাল্টা তির— শিলিগুড়ির আগে কলকাতায় মন দিক ওঁর দল! আর আছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক, মূলত যিনি উদ্যোগী হয়ে শিলিগুড়িতে বন্ধ করেছিলেন ক্যারিব্যাগের ব্যবহার। তিনি কেন এখনও পথে নামছেন না, এই নিয়ে এর মধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পরিবেশবিদরা।

Advertisement

সব মিলিয়ে প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে এখন শিলিগুড়ি জমজমাট।

সিকিম বা দার্জিলিং পাহাড়ের মতো এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। শিলিগুড়িতেও এত দিন ধরে এই ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু এখন হঠাৎ অশোকবাবু বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব জানিয়েছেন, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যে লুকিয়েচুরিয়ে আবার ব্যবহার শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। অনেকেই মনে করছেন, জেলায় দলের যে ভেঙে পড়া অবস্থা, সেখান থেকে তাকে আবার চাঙ্গা করতেই এই জনপ্রিয় বিষয়টি বেছে নিয়েছেন গৌতমবাবু। সিপিএম সূত্রের দাবি, তৃণমূলের এই আন্দোলনকেই মূলত নিশানা করতে চাইছেন অশোক।

Advertisement

শুক্রবার তিনি এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘শিলিগুড়িকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে তৃণমূলের কোনও কৃতিত্ব নেই। তখন কংগ্রেসের বোর্ড পদক্ষেপ করেছিল। কলকাতা পুরসভায় তো তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। সেখানে তো তারা কোনও পদক্ষেপই করতে পারেনি। শুধু বড় বড় বিবৃতি দিলেই হয় না।’’

এটাই একমাত্র বিবৃতি না। অশোক আগেও প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন করেছেন, কলকাতা যা পারেনি, তা শিলিগুড়িতে করাতে তৃণমূল নেতাদের এত মাথাব্যথা কেন? পরিবেশপ্রেমীরা তাঁর এই কথায় রীতিমতো শঙ্কিত। তাঁদের বক্তব্য, মেয়র যদি এমন কথা বলেন, তা হলে তো প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফিরে আসতে বাধ্য। বস্তুত, পরিস্থিতিও এখন প্রায় তেমনই। শহরের যে দোকানিরা এত দিন চুপিচুপি এমন ব্যাগ দিতেন, তাঁরা এখন বুক ফুলিয়ে সে কাজ করছেন। কেউ কেউ অশোকবাবুর কথা মুখস্থ আউড়ে দিচ্ছেন। কেউ আবার তাঁর নামে জয়ধ্বনিও দিচ্ছেন। যা দেখেশুনে গৌতমবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার আবার শুরু হলে সর্বনাশ।’’ এর পরেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ যাতে ফের চালু হয়, মেয়র তো সে জন্য যা যা করণীয় সবই করছেন!’’

মেয়রের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলন সুজয়বাবুও। এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে সুজয়বাবুর প্রতি মেয়রের কটাক্ষ, ‘‘প্লাস্টিক রুখতে কোনও কাজ হচ্ছে না— বারবার এমন কথা বলা ঠিক নয়।’’ অশোকবাবুর দাবি, ‘‘প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ রোখার অভিযানে কিছু দুর্বলতা রয়েছে তা স্বীকার করছি। তবে সকলের সহযোগিতা চাই।’’

এর জবাবে আবার সুজয়বাবু বলেন, ‘‘মেয়র হওয়ার পরের দিনই অশোকবাবু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিরোধী কমিটি গঠনের কথা বলেছিলেন। সেটা এখনও হয়নি।’’ তার পরে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘কোন ক্যারিব্যাগ নির্মাতা কার কাছে, কবে গিয়েছেন, কোন নির্মাতার বাড়িতে কে গিয়ে বৈঠক করেছেন, এর পরে সে সব জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করব। এ ছাড়া শিলিগুড়িকে ভযাবহ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর উপায় নেই।’’ —ফাইল চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement