লোকসভা ভোটে জোট-সঙ্গী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা শিলিগুড়ি পুরভোটের প্রচারেও বিজেপি-কে সাহায্য করতে চাইছে। কিন্তু সে সাহায্য নিতে নারাজ বিজেপি-র অনেকে। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, পুরভোটে বিমল গুরুঙ্গের মতো মোর্চার শীর্ষ নেতাদের প্রচারে দৈবাত্ পৃথক গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ উঠলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ তকমা দিয়ে কোণঠাসা করা হবে বিজেপি প্রার্থীদের। সে জন্য প্রয়োজনে মোর্চা নেতাদের ঘরোয়া বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী তাঁরা। বিজেপি সূত্রের দাবি, সে সব বৈঠকেও ‘গোর্খাল্যান্ড’ প্রসঙ্গে মোর্চা নেতাদের মুখে কুলুপ এঁটে রাখার বার্তাই গিয়েছে দলের তরফে।
দলের ভিতরে যখন এই ‘অস্বস্তি’ তখন, বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু এবং তাঁর অনুগামীরা কিন্তু ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তাসি দর্জি লামা ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের লালুমায়া ছেত্রীকে (দু’জনেই নেপালিভাষী) ‘মোর্চার পছন্দের প্রার্থী’ বলে প্রচার করছেন। রথীনবাবুর যুক্তি, “নেপালিভাষীদের ভোট নিশ্চিত করার জন্য মোর্চা নেতাদের প্রচারে আনতেই হবে।”
কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, দলের অন্দরে কিছু নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা মোর্চার ‘পছন্দের প্রার্থী’ হিসেবে পরিচিত হতে চান না। তাঁদের পাল্টা যুক্তি পাহাড়ে মোর্চার গোর্খাল্যান্ডের দাবির আলাদা তাত্পর্য থাকতে পারে, শিলিগুড়ি পুর-এলাকায় তাতে চিঁড়ে ভেজা মুশকিল। পুর-এলাকায় নেপালিভাষীরা সংখ্যালঘু, অন্য ভাষার লোকজন বেশি। পুর-এলাকার মধ্যে মোর্চাকে প্রচারে দেখলে অন্য ভাষাভাষী ভোটারদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাঁদের। এই কারণেই লোকসভা ভোটে সমতলে প্রচার করলেও মোর্চা নেতাদের শিলিগুড়ি পুর-এলাকায় প্রচারে আনা হয়নি।
মোর্চা নেতাদের প্রচারে ব্যবহার করা নিয়ে দলের অন্দরে কি অস্বস্তি রয়েছে? সরাসরি জবাব না দিয়ে দার্জিলিঙের মোর্চা সমর্থিত বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “শিলিগুড়ি পুরভোটে মোর্চার প্রার্থী নেই। যে সব এলাকায় তাঁদের সমর্থক রয়েছে, সেখানে বিজেপি-র পক্ষে মোর্চা নেতারা প্রচার চালাবেন বলে ঠিক হয়েছে।”
যদিও মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, “দরকার পড়লে তবেই আমরা শিলিগুড়িতে প্রচারে যাব। দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গও যাবেন। প্রকাশ্য সভা না ঘরোয়া বৈঠক হবে, সেটা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করব। যা-ই হোক না কেন, সেখানে মূলত উন্নয়ন নিয়েই কথা বলব।”
তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএমের শিলিগুড়ি পুর-এলাকার নেতারা অবশ্য পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। যদি গুরুঙ্গদের দিয়ে পুর-এলাকায় প্রচার করানো হয়, তা হলে ‘বাংলা ভাগের চক্রান্ত’-এর অভিযোগ সামনে রেখে বিজেপি-কে বেঁধা হবে বলে এক রকম ঠিক হয়ে রয়েছে।