কী কী শর্তের ভিত্তিতে শিলিগুড়ি পুরসভায় বামেদের সমর্থন করবেন তার খসড়া তৈরির কাজ প্রায় সেরে ফেলেছেন শিলিগুড়ি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ ওরফে (অমু)। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শর্ত সহ সমর্থনের চিঠি আজ শুক্রবার অথবা আগামীকাল শনিবারের মধ্যেই দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের নেতৃত্বকে পৌঁছে দেবেন। বামেদের সঙ্গে বৈঠকও হবে তাঁর। দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ককে লেখা চিঠিতে শিলিগুড়ির আগের পুরবোর্ডের সময়ে নেওয়া প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে রূপায়ণের শর্ত দিয়েছেন অরবিন্দবাবু। ভূমিকম্প প্রতিরোধে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা না নিলে শহরে বহুতল গুলিকে ছাড়পত্র না দেওয়া, প্যাডেলার লাইসেন্স থাকলে রিকশা বা টোটো কেনার জন্য ঋণ দেওয়ার শর্তও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সমর্থনের চিঠির শুরুতেই অবশ্য স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত ভাবে পুরসভার কাজকর্ম পরিচালনার শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন অরবিন্দবাবু। এবারের পুরভোটের প্রচারে প্রাক্তন কাউন্সিলরদের কয়েকজনের বিষয় সম্পত্তি ফুলেফেঁপে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। এমন অভিযোগ উঠলে জনমানসে কাউন্সিলরদের প্রতি ‘বিরূপ’ ধারণা তৈরি হয় বলে দাবি করেছেন অরবিন্দবাবু। সে কারণে সমর্থনের শর্ত হিসেবে অনিয়মের অভিযোগের দ্রুত যথাযথ তদন্তের কথাও চিঠিতে রেখেছেন তিনি। চিঠিতে রয়েছে, পুরসভার অভিযোগ বাক্সে জমা পড়া সব নালিশ শুনে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার দাবিও। সব মিলিয়ে ডজনখানেক শর্ত রেখেছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী অরবিন্দবাবু। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিজে সহকর্মীদের সঙ্গে শর্ত নিয়ে কয়েক দফায় আলোচনাও সেরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড আমার সমর্থনের প্রথম শর্ত। চারদিকে যে সব অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়, তা একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার কাছে অসম্মানের। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অভিযোগ উঠলেই দ্রুত পদক্ষেপ হয় তা সুনিশ্চিত করতে বলব। অনিয়মের সঙ্গে কোনরকম আপস করা চলবে না বলে জানাব।’’
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা বামেদের মেয়র পদের দাবিদার অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলা পুরবোর্ড গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা প্রচার চালিয়েছিলাম। শিলিগুড়ির বাসিন্দারা যথাযথ পরিষেবা পাক, নাগরিক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাক আমরা তাই চাই। অরবিন্দবাবুর শর্তের চিঠি এখনও হাতে পাইনি। তবে তিনি যে শর্তের কথা বলেছেন শুনেছি, তা আমরা আগেই বলেছি। অমুবাবুর মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ বিরল। তাই কোনও সমস্যা হবে না।’’
শহরের বাসিন্দাদের নিত্যদিনের দুর্ভোগ লাঘবের কয়েকটি প্রস্তাবও শর্তে রাখবেন বলে অরবিন্দবাবু জানিয়েছেন। শহরের হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, বিধান রোডের ফুটপাত জুড়েই অবৈধ ভাবে পার্কিং গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। যার জেরে পথচারীদের যেমন দুর্ভোগে পড়তে হয় তেমনিই রাস্তা ছোট হয়ে যাওয়ায় যানজটও লেগে থাকে বলে অভিযোগ। অবৈধ পার্কিংকে কেন্দ্র লক্ষাধিক টাকার লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে। শহরে সুষ্ঠু পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে পুরবোর্ডের অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে দাবি করেছেন অরবিন্দবাবু।
বিধান রোডের একটি বির্তকিত বাণিজ্যিক নির্মাণের জায়গায় পার্কিঙের ব্যবস্থা করতে বছরখানেক আগে প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাব্যক্তির কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন অরবিন্দবাবু। শর্তের মধ্যে নির্দিষ্ট করে কোনও বাণিজ্যিক নির্মাণের উল্লেখ না করলেও, পুরবোর্ড গঠনের পরে ফের সেই প্রস্তাব তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অরবিন্দবাবু বললেন, ‘‘বিষয়টি আমার ভাবনার মধ্যে রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে সৌন্দর্যায়ন করে পার্ক এবং ভূগর্ভস্থ পার্কিঙের ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। পুরবোর্ডের কাছে এটা আমার দাবি থাকবে।’’
এ ছাড়াও পুরসভার সাফাই কর্মীদের পরিবারের পড়ুয়াদের বিশেষ করে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা, সব ওয়ার্ডে নিয়মিত খেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা অরবিন্দবাবুর শর্তে থাকছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের একটি নিজস্ব অরাজনৈতিক অফিস পুরসভার থেকে তৈরি করে দেওয়ার দাবিও রেখেছেন অরবিন্দবাবু। কাউন্সিলর বদলালেও অফিস একই থাকবে। এর ফলে কাউন্সিলরের কাছে কাজে যেতে হলে কোথায় যেতে হবে, তা বাসিন্দাদের জানা থাকবে বলে অরবিন্দবাবুর দাবি।