মোটরবাইক নিয়ে প্রচার।—নিজস্ব চিত্র
কমিশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রচারের সময় বাইক র্যালি করার অভিযোগ উঠল মালদহের চাঁচল আসনের জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গোটা এলাকা জুড়ে রোড-শো করে জোটের প্রচার চালানো হয়। পিছনে একটি গাড়িতে ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম বেনজির নুর।
বিজেপি ও তৃণমূল অবৈধ বাইক র্যালির অভিযোগ করার পরেই বাইকবাহিনীর ছবিও তোলা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। সব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে প্রশাসন। বিরোধীদের বিধি ভঙ্গের অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি বাম-কংগ্রেস জোটের নেতারা। তাঁদের দাবি, জোটের সঙ্ঘবদ্ধ প্রচারে ভয় পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের নানা ভাবে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এ দিন শ্রীরামপুর এলাকায় প্রচারের সময় সাংসদ মৌসম ও প্রার্থী আসিফকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান একদল বাসিন্দা। প্রার্থীকে এলাকায় দেখা যায় না বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। জোটের নেতাদের দাবি, বিরোধীরা চক্রান্ত করেই এমন কথা বলছেন।
চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও তথা অতিরিক্ত রিটার্নিং অফিসার সুব্রত বর্মন বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সব খতিয়ে দেখেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ দিন সকাল ১১টায় চাঁচল কেন্দ্রের দক্ষিণ শহর এলাকা থেকে রোড-শো করে জোটের প্রচার শুরু হয়। জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম ছাড়াও জোটের ওই প্রচারে ছিলেন বাম নেতা-কর্মীরাও। দক্ষিণ শহর থেকে শুরু করে আটটি অঞ্চলে এ দিন টানা প্রচার চালানো হয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, রোড-শো করে প্রচারের সময় জনা ত্রিশেক কর্মী-সমর্থকের বাইক র্যালিও অংশ নিয়েছিলেন। তাদের বাইকে দলের পতাকা, ফেস্টুনও ঝোলানো ছিল। প্রার্থী আসিফও কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও কর্মীদের বাইকে চেপে প্রচার চালিয়েছেন। সারা দিন ধরে বাইক র্যালি করে প্রচার চালানো হলেও তা বন্ধ করতে প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, ‘‘কমিশন যে বাইক নিষিদ্ধ করেছে, তা জেনেও আমরা বাইক র্যালি করতে যাব কেন? এ দিন বিভিন্ন এলাকা দিয়ে রোড-শো করে প্রচারের সময় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অনেকেই প্রচারে অংশ নেন। তাঁরা বিষয়টি জানতেন না। তবে তাঁদের নিষেধ করার পরে তাঁরা বাইক নিয়ে ফিরে যান। তারপরেও সামান্য একটি ঘটনাকে নিয়ে অযথা জলঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে জোটের সংগঠিত প্রচার আর বাসিন্দাদের উচ্ছ্বাস দেখে ভয় পেয়েই বিরোধীরা অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে।’’ শ্রীরামপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘সর্বত্র ব্যাপক সাড়া মিলছে। তাই বিরোধীরাই কয়েকজনকে দিয়ে আমাদের বদনাম করতে চাইছে। কিন্তু নোংরা রাজনীতি আমরা করি না।’’
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এবার নির্বাচনে বাইক র্যালি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গাড়িতে প্রচারের অনুমতি থাকলেও কমিশনের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিতে হবে। অন্যথায় আইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁচলের বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রামের অভিযোগ, ‘‘এ দিন জোটপ্রার্থীর সমর্থনে গোটা এলাকাতেই যে ভাবে বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে, তাতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে। আমরা কমিশনে নালিশ জানিয়েছি।’’
চাঁচল কেন্দ্রের তৃণমূলের নির্বাচনী প্রতিনিধি মজিবর রহমান বলেন, ‘‘পায়ের তলায় মাটি সরছে বুঝতে পেরে বাইকবাহিনীকে দিয়ে বিরোধীরা এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনাকে এখন অন্যদের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে।’’