দুই সম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগে পূর্বপাড়ায় কালীপুজোর আয়োজন নতুন কিছু নয়। তবে গত ৪৯ বছর ধরে হয়ে আসা ছোট মাপের ওই পুজোয় পাড়ার সব বাসিন্দাদের সামিল হওয়ার দরকার পড়ত না। কিন্তু এ বছর পুজোর সুবর্ণ জয়ন্তী। এলাকায় ঐক্য ও সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রাখতে পাড়ার হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সমস্ত বাসিন্দারা তাই পূর্বপাড়া সর্বজনীন শ্যামাপুজো কমিটি গঠন করে বড় মাপের কালীপুজোর আয়োজন করছেন।
রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়কের ধারে হেমতাবাদের পূর্বপাড়া। পাড়ার ১৫০ পরিবারের মধ্যে ৯০টি মুসলমান পরিবার, বাকি ৬০টি হিন্দু পরিবার। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের সুসম্পর্ক ও সহাবস্থানের সৌজন্যে পূর্বপাড়া সম্প্রীতির পাড়া বলে পরিচিত। পুজো কমিটির দুই চেয়ারম্যান আশরাফুল আলি ও নারু দেবভূতি বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ার সব বাসিন্দা সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় রাখার পক্ষে। সুবর্ণ জয়ন্তী বছরে সেই সম্প্রীতি আরও জোরদার করার শপথ নিতেই পাড়ার সকলে এক হয়ে পুজোর আয়োজন করছি।’’
কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জে গিয়ে পুজো মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার বরাত দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে সকলে চাঁদা তোলার কাজে ব্যস্ত। আশরাফুল জানান, প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বাজেটের এই পুজোয় শিব ও কালীর বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী ও শিবের বিয়ের অনুষ্ঠানকে থিম করা হচ্ছে। মন্দিরের আদলে বাঁশ, কাঠ, কাপড় ও প্লাইউড দিয়ে তৈরি মণ্ডপে মাটির তৈরি বিভিন্ন মডেল, প্রতিমা, বৈদ্যুতিন ফ্লেক্স ও আলোর মাধ্যমে সেই সব কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হবে।
পুজোর দু’দিন পর ৩১ অক্টোবর দুই সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা শোভাযাত্রা করে স্থানীয় তাঁতিপুকুরে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১ নভেম্বর মণ্ডপের পাশেই বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাতে কলকাতা, মালদহ ও দার্জিলিং জেলার বিশিষ্ট শিল্পীরা নাচ ও গান পরিবেশন করবেন।
আশরাফুল বলেন, ‘‘ঈশ্বর ও আল্লার রূপ আলাদা হলেও পার্থক্য নেই। সেই বিশ্বাসেই গত পাঁচ দশক ধরে আমাদের পাড়ার বাসিন্দারা সম্প্রীতি বজায় রেখেছেন।’’