চিকিৎসাধীন ফতেমা বিবি। (ইনসেটে) মৃত রুমা খাতুন। — নিজস্ব চিত্র
পথ নিরাপত্তার নিয়ম ভাঙার শিকার হলেন এ বার এক কলেজ পরীক্ষর্থী।
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ১০ চাকার লরি মোটর বাইকে ধাক্কা মারায় মৃত্যু হল এক কলেজ পরীক্ষার্থীর। আহত হয়েছেন ওই মোটরবাইকেরই আরোহী তাঁর বোন ও বোনের স্বামী। শনিবার দুপুরে ইংরেজবাজারের মালঞ্চপল্লি এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রুমা খাতুন (২০)। কালিয়াচকের সুলতানগঞ্জ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুমা মোজমপুরের বালুপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বোন ফতেমা বিবিও ওই কলেজের পরীক্ষার্থী। ফতেমা এবং তাঁর স্বামী আসমাউল শেখ মালদহ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।
এ দিনের দুর্ঘটনার জেরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই শুক্রবারই উদ্বেগ জানিয়েছেন। তার চব্বিশ ঘণ্টা না কাটতেই এই দুর্ঘটনা। পুলিশের দাবি, লরিটি যেমন নিয়ম ভেঙে দ্রুত গতিতে চলছিল, তেমনই মোটরবাইকের তিন আরোহীর কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লরিটিকে আটক করা হয়েছে। চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে। দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রুমা এবং তাঁর খুড়তুতো বোন ফতেমা সুলতানগঞ্জ কলেজের সাধারণ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাঁরা দু’জন এক সঙ্গেই পড়াশোনা করতেন। কালিয়াচকের একটি বিএড কলেজের পড়ুয়া আসমাউলের সঙ্গে মাস তিনেক আগে বিয়ে হয়। তাঁরা তিন জনেই একই গ্রামের বাসিন্দা।
এ দিন ছিল বাংলা ভাষার প্রথম পত্রের পরীক্ষা। সুলতানগঞ্জ কলেজের পরীক্ষার সিট পড়েছে মালদহ কলেজে। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয় সকাল দশটা নাগাদ। স্বামীর সঙ্গে মোটর বাইকে করে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ফতেমা। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের সঙ্গে মোটরবাইকে ওঠেন রুমাও। পথে ৩৪ লম্বর জাতীয় সড়কে মালঞ্চপল্লি সংলগ্ন এলাকায় দশ চাকার লরিটি বেপরোয়া গতিতে ছুটে গিয়ে পেছন দিক থেকে ধাক্কা মারে মোটরবাইকটিতে। সেটি উল্টে গেলে লরির নীচে পড়ে যান রুমা। তাঁর মাথার উপর দিয়ে লরিটি চলে যায়। রাস্তার ধারে উল্টে পড়েন ফতেমা ও আসমাউল। স্থানীয় বাসিন্দারা লরিটিকে আটক করলেও চালক পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে রুমাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ফতেমার আঘাতও গুরুতর। তাঁর বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছে। মাথাতেও আঘাত রয়েছে। আহত আসমাউলও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ঠিক দিকেই ছিলাম। ফরাক্কাগামী লরিটি নিয়ম ভেঙে আচমকা মোটরবাইকের পেছনে ধাক্কা মারলে আমরা ছিটকে যাই। দ্রুত গতিতে গাড়ি চললেও নজর দেয় না ট্রাফিক পুলিশ। ফলে বেপরোয়া গতিতে গাড়িগুলি চলছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যানজটের সময় নিয়ম ভেঙে গাড়ি চলাচল করে। একটি মোটরবাইক হেলমেটবিহীন তিন জন যাত্রী নিয়ে ছুটলেও হেলদোল নেই ট্রাফিক পুলিশ কর্তাদের। যার জন্য এমন ঘটনা ঘটল এ দিন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বাবু বলেন, ‘‘গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’