প্রতীকের মা শুক্লাদেবী। নিজস্ব চিত্র
শনিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ খরমুজাঘাট শ্মশানে ছেলে প্রতীকের শেষকৃত্য সেরে বাড়ি ফেরেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু ছেলে যে আর বাড়ি ফিরবে না মেনে নিতে পারছেন না শুক্লা চট্টোপাধ্যায়।
চাকুলিয়ার সূর্যাপুর হাইস্কুলের করণিক শুক্লা বারান্দার গেট ধরে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঠায়। কখনও বলছেন, ‘‘প্রতীক স্কুলে গিয়েছে। ও ফিরবে। তাই দাঁড়িয়ে রয়েছি।’’ কখনও বলছেন, ‘‘ছেলেকে খেতে দিতে হবে। ও কিছু খায়নি।’’
সম্বিত ফিরলে মাঝেমধ্যে বলছেন, ‘‘আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষ দায়ী।’’
প্রতীকের বাবা পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী সুনীলবাবু প্রায় বারো বছর আগে মারা গিয়েছেন। চাঁচলে বিয়ে হয়ে গিয়েছে প্রতীকের বড়দি অদিতির। ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন স্নাতক উত্তীর্ণ প্রতীকের ছোড়দি সাথীর। ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তিনিও। একনাগাড়ে বলে চলেছেন, ‘‘চারিদিকে ভাইয়ের পোশাক, জুতো, বই, খেলার জিনিস। মোবাইল ফোনটিও পড়ে রয়েছে। আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না।’’
প্রতীকের কাকু অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী সুশীলবাবুর দাবি, ‘‘প্রতীক মারা যাওয়ার পর শিলিগুড়িমোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাফিক পুলিশ অতি সক্রিয় হয়েছে। স্কুলের সামনে নির্বিঘ্নে হাঁটাচলার জন্য রেলিং বসানো হয়েছে। আগে এই পদক্ষেপ করলে প্রতীককে মরতে হত না। আমরা ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর করার কথা ভাবছি।’’
শনিবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ রায়গঞ্জের শিলিগুড়িমোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় স্থানীয় সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্রের দশম শ্রেণির ছাত্র প্রতীকের। ওই দুর্ঘটনার পর উত্তেজিত কয়েকশো বাসিন্দা পুলিশ কর্মীদের মারধর, ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয় ভাঙচুর চালায়। জখম হন ১৫ জন পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় ও লাঠিচার্জ করে। পুলিশের বিরুদ্ধে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে।