সার্কিট বেঞ্চ আসলে উত্তরবঙ্গের স্বপ্নপূরণ। এই কথাটিই ঘুরে ফিরে এল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের কথায়। এর পাশাপাশি হাইকোর্টে স্থানীয় ভাষায় সওয়াল করার আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। ইংরেজি ও বাংলার বাইরেও তিনি উত্তরবঙ্গের স্থানীয় ভাষাগুলির কথা বলেন এ ক্ষেত্রে। একই প্রসঙ্গ না হলেও কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জনজাতি কথা।
সব মিলিয়ে সূচনা অনুষ্ঠানে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টিই বারবার এসে পড়ে।
প্রধান বিচারপতি অবশ্য এই ঐক্যের কথা স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন এ দিনের বক্তৃতায়। তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ তৈরির প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি সার্কিট বেঞ্চ চালুর অনুমতি দিয়েছেন।’’ কোচ, মেচ, রাভা, তামাং, লেপচা-সহ বিভিন্ন জনজাতি উত্তরবঙ্গের তরাই, ডুয়ার্স ও পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বক্তব্যে সে কথা উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। উত্তরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও বর্ণনা দেন তিনি। বলেন, ‘‘হিমালয়ের পাদদেশে তিস্তা-করলার ধারে সার্কিট বেঞ্চ হয়েছে। উত্তরবঙ্গে জলদাপাড়া, গরুমারা, চিলাপাতা-সহ বিভিন্ন বনাঞ্চল আছে। সেগুলিতে বিচিত্র পশু-পাখিদের বসবাস। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এই অঞ্চলের বিশেষত্ব।’’ একই সঙ্গে রাজ্যের এই অংশের থেকে কলকাতার দূরত্বের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘এখন থেকে এই অঞ্চলের বিচারপ্রার্থীদের আর ৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে না।’’ বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তা পাঠ করে শোনান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতার একটি অংশেও এই বৈচিত্রের কথাই বলা হয়েছে। সার্কিট বেঞ্চে আইনজীবীরা যাতে স্থানীয় ভাষায় সওয়াল-জবাব করতে পারেন, সেই আবেদন রেখে তিনি বলেন, ‘‘সবাই খুব ভাল ইংরেজি বলতে পারবে, সেটা ভাবা ঠিক নয়। অনেক ভাল আইনজীবী আছেন। কিন্তু তাঁরা ভাল ইংরেজি বলতে পারেন না বা লিখতে পারেন না। এর জন্য খানিকটা সময় লাগবে। তাই স্থানীয় ভাষায় বলার সুযোগ দিতে হবে। স্থানীয় আবেগকে যেন দাম দেওয়া হয়, সেটাও দেখতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন বিভিন্ন জেলার বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারাও।
ভাষা সমস্যা দূর করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার যে প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের আমি জিজ্ঞাসা করি, তাঁরা বাংলা পড়তে বা বলতে পারেন কিনা। কারণ, সেটা না পারলে মানুষের অনেক সমস্যার কথাই তাঁরা জানতে পারবেন না। বিচারপতিদেরও এই সমস্যা হতে পারে। আবার যাঁরা শুধু স্থানীয় ভাষাতেই অভ্যস্ত, তাঁরাও নিজেদের কথা বিচারপতিদের বুঝিয়ে বলতে পারবেন না।’’
উত্তরবঙ্গের আইনজীবীদের একটা বড় অংশেরই হাইকোর্টে মামলা লড়ার অভিজ্ঞতা নেই। তাই সার্কিট বেঞ্চে মামলা লড়ার জন্য স্থানীয় আইনজীবীদের আরও বেশি করে চর্চা করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।