বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে উত্তর কন্যা ঢোকার পর মুখ্যমন্ত্রীর ছবি উত্তর কান্নায়। ছবি: বিনোদ দাস।
ধসে বিধ্বস্ত সিকিম, কালিম্পঙের ‘লাইফলাইন’ বলে পরিচিত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দ্রুত স্বাভাবিক করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। রবিবার বিকেলে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি এসে উত্তরের সব জেলার জল, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ছিলেন। সেখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে জাতীয় সড়কটি নিয়ে কথাবার্তা বলার দায়িত্ব দেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাস্তাটি ধসের জেরে খারাপ হয়ে রয়েছে। তবে ওটা জাতীয় সড়ক। কেন্দ্রীয় সরকারকে দেখতে হবে। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীরও দেখা দরকার। কারণ, সিকিমে সেনা যাতায়াতের অন্যতম রাস্তা এটা। মুখ্যসচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উনি সবার সঙ্গে কথা বলবেন।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ছ’মাস ধরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক নিয়ে টানাপড়েন চলছে। এর আগেও প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী এই জাতীয় সড়কের দায়িত্ব কেন্দ্রকেই নিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর যাতায়াতের গুরুত্ব, কেন্দ্রের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে রাজ্যের টাকা খরচে লাগাম টানার কথা বলেছিলেন। এ বারও তিনি বুঝিয়ে দিলেন, কেন্দ্রকেই রাস্তাটি ঠিক করতে হবে। যদিও রাস্তাটি মেরামতির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলও ঠিকঠাক আসেনি বলে সরকারি সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
কয়েক মাস আগে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা দাবি করেছিলেন, জাতীয় সড়কটির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রক নিতে চলেছে। যদিও এখনও এটা নিয়ে কেন্দ্রের কোনও নির্দেশিকা নেই। এই পরিস্থিতিতে পুজোর আগে সিকিম, কালিম্পঙের পর্যটনে মার খাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেকে আগে থেকে বুকিংও করে রেখেছেন। রাস্তা ঠিক না থাকলে, সমস্যা হবেই। মুখ্যসচিব দ্রুত বিষয়টি দেখবেন। কেন্দ্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’’
গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিতে একাধিক জায়গায় ধস নামায় জাতীয় সড়কটি বন্ধ হয়ে যায়। গত শুক্রবার থেকে একের পর এক ধস নামে শ্বেতিঝোরা, বিরিকধারা, সেলফিডারা, ২৮ মাইলের মতো এলাকায়। সেবক-কালিঝোরা এলাকাতেও ধস নামে। বৃষ্টিতে কাজ করা না গেলেও আবহাওয়া ভাল হওয়ায় রবিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। চিত্রে, তিস্তাবাজারের পরিস্থিতি ভাল হয়েছে কিছুটা। মেল্লি থেকে রংপো এক দিক দিয়ে গাড়ি চলেছে। তা সত্ত্বেও এখনও গোটা জাতীয় সড়কের পরিস্থিতি খুব খারাপ বলে প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা জানান, একের পরে এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও জলাধার, সেবক-রংপো রেলপথের পর পর পাহাড় কেটে টানেল হওয়ায় এলাকায় পাহাড়ের কিছু ক্ষতি তো হয়েছেই।
সেই সঙ্গে তিস্তার ভয়ঙ্কর রূপ গত বছর অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। সিকিমে দক্ষিণ লোনাক হ্রদের পাড় ভেঙে বিপর্যয়ের জেরে তিস্তার চেহারাই পাল্টেছে। আবার বহু এলাকায় তিস্তায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জলাধারের পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে কংক্রিটের ‘গার্ডওয়াল’ও হয়নি। তাতে নদীর জল পাহাড়ের নীচের অংশে ঢোকা শুরু হয়েছে। এতে পাহাড়ের ক্ষতি হচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতেই জাতীয় সড়কটি ধসে বসে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিবেশপ্রেমী থেকে পর্যটন সংগঠনগুলি দ্রুত বিকল্প রাস্তার দাবিও তুলেছে।