— প্রতীকী চিত্র।
আবাস তালিকায় পড়শি তৃণমূল নেতার বাড়ির ১২ জনের নাম উঠেছে। বেনিয়ম করে ওই নাম তোলা হয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সিটু-র এক নেতা। অভিযোগ, তা জেনে ওই তৃণমূল নেতা লোকজন নিয়ে অভিযোগকারীর উপরে চড়াও হন। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযোগ, পরে ওই তৃণমূল নেতার বাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন অভিযোগকারীর পরিজনেরা। রবিবার সকালে মালদহের মানিকচক ব্লকের ভূতনির দক্ষিণ চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের লুটিহারা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, আবাস তালিকায় তৃণমূল নেতা আবির আলি-সহ তাঁর পরিবারের ১২ জনের নাম উঠেছে। অভিযোগ, নিজেদের পাকা বাড়ির পরিবর্তে অন্যের কুঁড়েঘর দেখিয়ে অবৈধ ভাবে তালিকায় নাম তোলেন ওই ১২ জন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের কাছে নালিশ জানান সিটু-র পরিযায়ী শ্রমিক নেতা দানেশ আলি। তদন্তও দাবি করেন।
অভিযোগ, এ দিন সকালে লোকজন নিয়ে গিয়ে দানেশকে বেধড়ক মারধর করেন আবির। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়। দানেশের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। জখম যুবককে প্রথমে মানিকচক ও পরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরে দ্বিতীয় দফায় ওই দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফের গোলমাল শুরু হয়। অভিযোগ, দু’পক্ষই একে অন্যের বাড়ির দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে। আবিরের বাড়িতে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ভূতনি থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। হামলার ঘটনায় চার জনকে আটক করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
এ দিন দানেশ বলেন, ‘‘সকালে বাড়ি থেকে বার হলে আবির আলি লোকজন নিয়ে আমাকে মারধর করে। নাক-মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু আমি আবাস যোজনা নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম, সেই কারণে এই হামলা।’’ এ নিয়ে আবিরের কোনও বক্তব্য মেলেনি। তাঁর পরিবারের লোকেদের দাবি, আবাস তালিকা কোনও বিষয়ই নয়। জমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে গোলমাল চলছে। তাঁদের অভিযোগ, আবিরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একটি মোটরবাইকও পোড়ানো হয়েছে।
এর পরে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। দানেশের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে শুরু হয় তরজা। জখম দানেশ হাসপাতালে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেন, তিনি কিছু দিন আগে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের হাত ধরে শাসকদলে যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পরে সিটু নেতৃত্ব এ দিনই দানেশকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেন। এ নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়েছে তৃণমূলেও। দলের এক পক্ষের দাবি, দানেশ তৃণমূলের সমর্থক। অন্য পক্ষের দাবি, দানেশ ও আবির আলি তৃণমূলের কেউ নন।
সিটু সূত্রে খবর, ভূতনির লুটিহারা গ্রামের বাসিন্দা দানেশ আলি সিপিএমের পরিযায়ী শ্রমিক সংগঠন ‘মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স কাউন্সিলের’ জেলা সদস্য ছিলেন। কয়েক দিন আগে আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকা নিয়ে তিনি এলাকার তৃণমূল নেতা আবির আলি, উজির আলি-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে জেলা, মহকুমা ও ব্লক প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান।
সিটুর মালদহ জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহ বলেন, “দানেশ দলের পরিযায়ী সংগঠনে ছিলেন। কিন্তু সমাজমাধ্যমে তিনি নিজেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করায় আমরা তাঁকে বহিষ্কার করেছি।” যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘দানেশের হাতে দলীয় পতাকা তুলে না দেওয়া হলেও তিনি আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন।’’ তবে মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র বলেন, ‘‘এ দিনের গোলমালে জড়িত দুই পক্ষই আমাদের দলের কেউ নয়। যাঁরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন, পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে।’’