ঝড়ের তাণ্ডবের পর। ছবিটি তুলেছেন বাপি মজুমদার।
৪৫ মিনিটের টানা ঝড়ে মালদহের চাঁচল-১ ও চাঁচল-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। শনিবার ভোররাতের ওই ঝড়ে কয়েকশো বাড়ির টিন ও খড়ের চাল উড়ে গিয়েছে। বহু বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে বেশ কিছু বাড়ির। বহু এলাকায় ঝড়ে বিদ্যুতের তারের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম ও বোরোধানের। বহু এলাকায় জমিতেই ধান কেটে রেখেছিলেন চাষিরা। সেখানে জল জমে যায়। পাশাপাশি ঝড়ের দাপটে ধানগাছ জমিতে নুইয়ে গিয়েছে।
শনিবার ভোর তিনটে নাগাদ চাঁচল মহকুমা জুড়ে ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ঘনঘন বজ্রপাত। দুটি ব্লকে ঝড়ের দাপট ছিল প্রবল। রাত থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইন, মোবাইল টেলিফোন সহ ইন্টারনেট পরিষেবাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় এলাকাগুলিতে পানীয় জলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় ১০ ঘন্টা পরে শনিবার দুপুরের দিকে চাঁচল শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গ্রামগুলি বিদ্যুতবিহীন হয়েই থেকে যায়।
ঝড়ে ঘরবাড়ি ভাঙার পাশাপাশি বোরো চাষেরও ক্ষতি হওয়ায় মুষড়ে পড়েছেন চাষিরা। পাশাপাশি ওই ঝড় বহু আমচাষিকে কার্যত পথে বসিয়েছে। মালদহের জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘বিডিওরা এলাকায় ঘুরছেন। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে তাঁদের। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কৃষি দফতরের মালদহের উপ অধিকর্তা অনন্তদেব মাইতি বলেন, ‘‘৭৫ শতাংশ বোরোধান উঠে গিয়েছে। যা রয়েছে তাও কম নয়। কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখছি।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁচল শহর সহ দুটি ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় ঝড়ের তান্ডব এতটাই ছিল যে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে নূরগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ, সহরবাগ, দুলিয়াবাড়ি, দক্ষিণশহর, বামুয়া, চন্দ্রপাড়া, ও খানপুর। সাহেবগঞ্জের চাষি আব্দুল খালেক বলেন, ‘‘দু’ বিঘা জমিতে ১৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলাম। ঝড়ে পাকা ধান যেভাবে ঝরে পড়েছে তাতে খরচটুকুও উঠবে না। শেষ সময়ে পথে বসতে হল।’’ একই অবস্থা কৃষ্ণগঞ্জের শেখ মহীরুদ্দিন, বামুয়ার হজরত আলির। মহীরুদ্দিন বলেন, ‘‘আমার জমিতে কেটে রাখা দু’বিঘা জমির ধান জলে ভাসছে। নূরগঞ্জের ইনতাজ আলি, খানপুরের গোল মহম্মদরা জানান, ঝড়ে বাড়ি ভেঙে পড়ার পর সঞ্চিত ধান, গম সবই বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ ভেবে আতঙ্কিত তারা।
সহরবাগের দিলদার হোসেন বলেন, ‘‘লাভের আশায় আমবাগান কিনেছিলাম। কিন্তু আটটি গাছ ভেঙে পড়েছে। বাকি গাছের প্রায় সব আম ঝড়ে ঝরে গিয়েছে। শেষ সময়ে এভাবে পথে বসতে হবে ভাবিনি।’’ একই অবস্থা দুলিয়াবাড়ির নজরুল হকেরও।
চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব বলেন,‘‘ দুর্গতরা যাতে দ্রুত ত্রাণ পায় প্রশাসনকে তা দেখতে বলেছি।’’