জলপাইগুডড়ি পৌরসভা। —ফাইল চিত্র।
নিজের দলের পুরপ্রতিনিধিদের উপরেই প্রকাশ্যে ক্ষোভ ও কিছুটা অভিমানের কথা জানিয়ে দিলেন জলপাইগুড়ি পুরসভার তৃণমূলের পুরপ্রধান পাপিয়া পাল। গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা পুর-বৈঠক ছিল। ওই দিন জলপাইগুড়ির জেলাশাসকের ঘরে ‘ভার্চুয়াল’ সভায় পুর পরিষেবা নিয়ে দলীয় কিছু পুরপ্রতিনিধি পাপিয়ার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে ‘নালিশ’ করেন বলে সূত্রের দাবি। সে প্রসঙ্গ তুলে বুধবার পুরসভায় বসে পাপিয়ার দাবি, তাঁর হাতে পুরসভার কোনও দফতরেরই দায়িত্ব নেই। তাঁর কথা, “ক্ষোভ থাকলে, আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনুন ওঁরা।”
ওই বৈঠকের দিন পাপিয়া ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নের সভাঘরে। এ দিন পুরসভায় নিজের ঘরে বসে পুরপ্রধান বলেন, “দলের পুরপ্রতিনিধিদের যদি আমার উপরে ক্ষোভ থাকে, তা হলে বোর্ড গঠনের পরে দু’বছর তো হয়ে গেল, আর ছ’মাস পরে অনাস্থা এনে আমাকে সরিয়ে দিন। পদে থাকতে চাইনি। দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনাচিন্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে দল করি। পদের জন্য দল করি না।”
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় পুরসভাগুলির কাজ নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়ার পর থেকে জলপাইগুড়িতে তৃণমূলের অন্দরে ‘পুর-সংঘাতের’ শুরু। তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবার জলপাইগুড়িতে, জেলাশাসকের সভাঘরে, ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠকে উপস্থিত পুরপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ পরিষেবা নিয়ে সরাসরি পুরপ্রধানের নামে ‘নালিশ’ জানান জেলার আধিকারিকদের। সূত্রের খবর, জেলাশাসক আবর্জনা সাফাই নিয়ে জানতে চাওযায় তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিরা দাবি করেছিলেন, পুরসভায মাসিক বৈঠক হয় না। পুরপ্রতিনিধিরা নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারেন না। এর পরেই জলপাইগুড়ির জেলাশাসক আগামী ২৮ জুন জলপাইগুড়ি পুরসভা নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন।
নিজের এলাকার কিছু কাজ নিয়ে তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ পুরপ্রধানকে না জানিয়ে সরাসরি মহকুমাশাসক, জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন। এ দিন পাপিয়া বলেন, “আমি শুনেছি, কেউ কেউ আধিকারিকদের কাছে আমার কথা বলছেন, আমাকে না জানিয়ে সরাসরি চিঠি দিয়েছেন। এটা আমার কাছে খুবই লজ্জাজনক।” তার পরেই পুরপ্রধানের দাবি, “আমার হাতে কোনও দফতর নেই। উপপ্রধান কে হবেন, কার হাতেন কোন দফতর থাকবে, তা-ও ঠিক করিনি। সে সব তো দল ঠিক করেছিল। সব দফতর ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, আমার হাতে তো কোনও দফতর নেই।” ঘটনাচক্রে, পুরসভার দফতরগুলির বেশিরভাগই উপ পুরপ্রধান সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। এ বারের লোকসভা ভোটে দলগত ভাবেও সৈকতের হাতে বেশির ভাগ ওয়ার্ডের দায়িত্ব ছিল, পাপিয়া পুরপ্রধান হলেও তাঁর দায়িত্বে ছিল মাত্র দু’টি ওয়ার্ড।
পুরপ্রতিনিধি তথা তৃণমূলের শহর ব্লক সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি যতদূর জানি, পুরপ্রতিনিধিরা পুরসভায় নিয়মিত বৈঠক না হওয়ার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন।” জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “পুরপ্রধান দলকে জানালে, আলোচনা করা হবে।”