সান্ত্বনা: মণিপুরে ধসে মৃত জওয়ানদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
মণিপুরের ধসে মৃত সেনা জওয়ানদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে কার্যত কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন শুরু হল। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিলিগুড়ির বেংডুবি সেনা ছাউনিতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং সেনাপ্রধান মনোজ পান্ডে। ধসে ১৯ জন মৃত জওয়ানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আর্থিক সাহায্য করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘গোর্খাদের বীরগাথার কথা সবাই জানেন। মৃত্যুভয় যাঁরা পান না, তাঁরাই গোর্খা। ফিল্ড মার্শাল মানেকশ’র কথায় আমরা গোর্খাদের সব সময় মনে রাখি।’’
সেনাবাহিনীর তরফে এ দিন জানানো হয়, মৃতদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১.৩২ থেকে ১.৫২ কোটি টাকা দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ দিন ক্ষতিপূরণের অঙ্কের একটি অংশ হিসেবে সাত লক্ষ টাকা করে পরিবার পিছু দিয়েছেন।
রাজনাথের সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা। এ দিন ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে পরে তিনি রাজ্য সরকারকে ‘তুলোধোনা’ করেন। পরিবারগুলিকে হোমগার্ডের চাকরি গোর্খাদের অপমান করা হয়েছে বলেও সাংসদ মন্তব্য করেন। যা নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘এমন একটা অনুষ্ঠানে সাংসদের বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অঘটনের পরেই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ান। মৃতেরা সেনার লোক। কেন্দ্রের আগেই আসতে হত। আসলে ওঁদের সব রাজনীতিকেন্দ্রিক আচরণ। রাজ্যকে দেখে এখন এসে এ সব করছেন।’’ তবে রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়ে রাজনাথ কোনও মন্তব্য করেননি। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় হাতজোড় করে তিনি চলে যান।
গত ২৯-৩০ জুন মণিপুরে ইম্ফল লাগোয়া টুপুল রেল স্টেশনের কাছে, রেললাইনের সুরক্ষায় মোতায়েন ছিল সেনার ১০৭ নম্বর ব্যাটেলিয়ন। রাতে বিশাল ধসে ৬১ জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে ১৭ জন দার্জিলিং এবং এক জন জলপাইগুড়ি জেলার বাসিন্দা। রাজ্য সরকার ঘটনার পরে দু’লক্ষ টাকা পরিবার পিছু দিয়েছে। ১৫ অগস্ট কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি পরিবারের এক জন করে সদস্যকে হোমগার্ডের নিয়োগপত্র দিয়েছেন। এ দিন বিজেপি সাংসদের অভিযোগ, ‘‘ওই মহিলারা বেশিরভাগ স্নাতক। পাঁচ-ছ’ হাজার টাকার হোমগার্ডের চাকরি দিয়ে অপমান করা হল। তা-ও স্থায়ী চাকরি কি না, জানি না। আমি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানকে সেনা দফতর, স্কুলে ওঁদের চাকরির কথা বলেছি।’’ যা নিয়ে গৌতম দেবেব পাল্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘২০২৪ সাল আসছে তো! তাই রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চলছে।’’
পেমা লামু শেরপা, করিশমা ছেত্রীর মত মৃত জওয়ানদের স্ত্রীয়েরা জানান, সব সরকার তাঁদের পাশে আছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু হোমগার্ডের চাকরি স্থায়ী কি না, তা তাঁরাও জানেন না।
ঘটনায় জখম নদিয়ার বাসিন্দা, জওয়ান রূপন টিকাদার স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে বেংডুবিতে এসেছিলেন এ দিন।