ভোটের বৈশাখে কবি সবার লোক

কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের হাড়িভাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাশিডাঙ্গা এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন শঙ্কর। ৩১ বছরের ওই যুবক পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০৩:১৭
Share:

বৈশাখী হাওয়ায় ভোটের সুর। তাই পঁচিশে বৈশাখে রবি-স্মরণে সব দলের শরণ সেই কবিগুরুই। কোচবিহার থেকে জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার— ছবিটা একই।

Advertisement

প্রার্থীর হাতে গীতাঞ্জলি

ভোট চাইতে গিয়ে কবিতা শোনাবেন প্রার্থী। আজ, পঁচিশে বৈশাখে এমনই পরিকল্পনা তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী শঙ্কর দেবনাথের।

Advertisement

কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের হাড়িভাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাশিডাঙ্গা এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছেন শঙ্কর। ৩১ বছরের ওই যুবক পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাঁর কথায়, “রবীন্দ্রনাথ আমার প্রিয় কবি। রাষ্ট্রবিঞ্জান সায়েন্স নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়লেও বিশ্বকবির বহু লেখা সে সময় পড়েছি। গীতাঞ্জলি তো এক বিস্ময়।” তিনি জানান, ২৫ বৈশাখে ‘গীতাঞ্জলি’ হাতে প্রচারে নামবেন কখনও ঘুরতে ঘুরতে কবির দুই-একটি প্রিয় কবিতাও ছোটদের সঙ্গে নিয়ে পাঠ করবেন তিনি। ছোটদের হাতে তুলে দেবেন চকলেটও। তাঁর বিরুদ্ধে একজন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করে বলেন, “শুধু রবি ঠাকুরের বই, ছবি নিয়ে ঘুরলে হবে না। তাঁর পথে চলতে। যেখানে এত হিংসা সেখানে তিনি থেকেও থাকবেন না।”

তৎপর সকলেই

জলপাইগুড়ির জেলা পরিষদের তৃণমূলের বিদায়ী সভাধিপতি নূরজাহান বেগমের মেয়ে সুলতানা নাসরিন সঙ্গীত নিয়েই পড়াশোনা করেন। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের উন্নয়ন নিয়ে নাসরিন গান বেঁধেছেন। সেই গানের অ্যালবাম প্রকাশের জম্য বেছে নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রজয়ন্তী। আজ বুধবার সেই অ্যালবামের উদ্বোধন করবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। আজ থেকেই বুথে বুথে সেই গান বাজানো হবে। সব বুথে থাকবে রবীন্দ্রনাথের ছবিও। অ্যালবামের উদ্বোধন করে সদর ব্লকে প্রচারও শুরু করবেন সৌরভবাবু। রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন প্রচারের জম্য বেছে নেওয়া হয়েছে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সদর ব্লকের কয়েকটি এলাকাকে। সেখানে সৌরভবাবুর সঙ্গী হবেন রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকা ট্যাবলো। সৌরভবাবুর কথায়, “ভোট বলে নয়, রবীন্দ্রনাথের আর্দশ, রচনা, লেখা আমাদের সবূসময়ের সঙ্গী। দলনেত্রীও রবীন্দ্রনাথের লেখায় অনুপ্রাণিত হন।”

সিপিএম অবশ্য দলগত ভাবে রবি-জয়ন্তী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়নি। জেলা সিপিএমের সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, “তাই বলে এমন মনে করার কারণ নেই যে, আমরা যাঁরা বামপন্থী তাঁদের শ্রদ্ধায় কোনও ত্রুটি রয়েছে। রবি ঠাকুর তো আমাদের মননে। আমাদের দলের কর্মীরা নিজেদের মতো করে কবির জন্মদিন পালন করবেন।“ সিপিএম সূত্রের খবর, গ্রামের মোড়ে, বাজারে, হাটে রবীন্দ্রনাথের ছবি টাঙিয়ে মালা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরাই নিজেদের সুবিধে মতো এই আয়োজন করবেন। তবে এ আয়োজন যে বামপন্থীদের তা বোঝাতে লাল শালুও থাকছে।

বিজেপিও পিছিয়ে থাকতে রাজি নয়। নির্বাচনী কার্যালয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজানোর নির্দেশ দেওযা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ছবি অবশ্যই রাখতে বলা হয়েছে, সম্ভব হলে গেরুয়া উত্তরীয় ছবির পাশে সাজিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সন্ধ্যেবেলায় ঘরোয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজনও থাকছে কয়েকটি জায়গায়। রবীন্দ্রসঙ্গীত শেষ হলেই মঞ্চে শুরু হবে নির্বাচনী ভাষণ।

প্রচারে কবির বার্তা

ধূপগুড়িতেও পঁচিশে বৈশাখ ও প্রচার একসঙ্গে আয়োজন করতে চায় তৃণমূল। জেলা সভাপতি সৌরভের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক ভাষণে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ বার বার তুলবেন আমাদের নেতা কর্মীরা। কারণ রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন নানা জাতির, নানা পরিধানের মানুষের দেশ ভারতবর্ষ। তাঁর সেই ভাবনা এই মুহূর্তে আমাদের প্রচারের বড় হাতিয়ার।’’ ধূপগুড়ি সদর মণ্ডলের বিজেপি নেতা তথা পুর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কৃষ্ণ দেব রায় অবশ্য সৌরভের এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের কর্মীরা যেভাবে শাসক দলের হাতে রোজ মার খাচ্ছে তা গণতন্ত্র বিরোধী। রবীন্দ্রনাথ মানুষে মানুষে হিংসা হানাহানির কথা বলে যাননি।’’

মালা দিয়ে প্রচারে

আলিপুরদুয়ারে কেউ মূর্তিতে মালা দিয়ে শুরু করবেন প্রচার৷ কারও প্রচারে থাকবে গান ও আবৃত্তি৷ তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলার কোথাও কোথাও প্রচারে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রনাথের কবিতাও পাঠ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷ পিছিয়ে নেই বিরোধীরাও৷ অনেক বিজেপি প্রার্থীও বুধবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা প্রচারে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আরএসপির জেলা সম্পাদক সুনীল বণিক জানান, তাঁদের অনেক প্রার্থীও মূর্তিতে মালা দেবেন৷ তারপর মানুষের কাছে গিয়ে প্রচার করবেন৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement