Superstition

‘আঁধার’ কাটাতে প্রচার

হবিবপুর থেকে গাজল। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে বৈষ্ণবনগর— ডিজিটাল যুগেও এমনই অন্ধবিশ্বাসে ডুবে রয়েছেন মালদহের একাংশ মানুষ।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা 

মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫৩
Share:

সচেতনতা: কদমতলা গ্রামে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন বিজ্ঞানমঞ্চের প্রতিনিধিরা। মালদহের গাজলে। নিজস্ব চিত্র

রাস্তায় কামড়েছে কুকুর। গুনিন হাত চালিয়ে ‘পড়ে’ দেন গুড়। তাতেই নাকি নেমে যাবে কুকুরের বিষ! কোলের শিশু ঘুমোচ্ছে না। কাঁদছে সব সময়। শিশুকে নাকি ‘হাওয়া-বাতাস’ লেগেছে। গুনিনের দেওয়া তেল, জল দিলেই ‘সুস্থ’ হয়ে উঠবে সে।

Advertisement

হবিবপুর থেকে গাজল। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে বৈষ্ণবনগর— ডিজিটাল যুগেও এমনই অন্ধবিশ্বাসে ডুবে রয়েছেন মালদহের একাংশ মানুষ। তাঁদের বিশ্বাস— জন্ডিস, জ্বর, আমাশার মতো রোগও সারাতে পারে গুনিন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন কুসংস্কারে অনেক সময় বিপদের মুখেও পড়তে হয় বহু মানুষকে। গুনিনে আস্থা রেখে হয়েছে প্রাণহানিও।

শুক্রবার গাজলের কদমতলা গ্রামের ঘটনা সামনে আসতেই হইচই পড়েছে জেলা জুড়ে। বাঁশবাগানে খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল গ্রামের চার শিশু। তাদের হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে, বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয় গুনিনকে। গুনিনের দেওয়া তেল, জল মালিশ করে দেওয়ার পরে বাড়িতেই রেখে দেওয়া হয় অসুস্থ শিশুদের। পরে তাদের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় দু’জনের। হাসপাতালে ভর্তি আরও দুই শিশু।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, চিকিৎসা পরিষেবায় অনেক উন্নতি করেছে মালদহ। জেলায় এক দশক আগে গড়ে ওঠে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, এমনকী ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকেও রোগীরা ভিড় জমান। একই সঙ্গে জেলায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রও একাধিক।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে এক দশক আগে জেলায় গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকী কলেজ, স্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়। এমনকী, বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে জেলায়। প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, একই সঙ্গে রাস্তাঘাটও ঝা চকচকে হয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটও উন্নত হয়েছে। যাতে জরুরি প্রয়োজনে সহজেই পৌঁছনো যায় কোনও চিকিৎসাকেন্দ্রে।

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার অমিতকুমার দাঁ বলেন, ‘‘অনেক সময় সর্পদংশনের রোগীকেও অবহেলা করা হয়। শেষ মূহূর্তে নিয়ে আসায় রোগীকে বাঁচানো যায় না। অথচ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও সাপের বিষের প্রতিষেধক, কুকুরের কামড়ের প্রতিষেধক মজুত রয়েছে।’’

বিজ্ঞানমঞ্চের সহ-সম্পাদক সুনীলকুমার সরকার বলেন, ‘‘সমস্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে থেকে অন্ধবিশ্বাস দূর করতে শিক্ষার আলো আরও ছড়ানো উচিত। গুনিন, ওঝাদের চিহ্নিত করে তাঁদেরও কাউন্সেলিং করা প্রয়োজন।’’

মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘সরকারি মেলা, অনুষ্ঠানগুলিতে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। এ বার গ্রামগঞ্জেও কুসংস্কার দূরীকরণে প্রচারে আরও জোর দেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement