পরিদর্শন: সার্কিট বেঞ্চের কাজ দেখতে জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) ও আরেক বিচারপতি নাদিরা পাথারিয়া। রবিবার। ছবি: সন্দীপ পাল
দেরি করবেন না, দ্রুত সাজ সারুন—সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী পরিকাঠামোর নির্মাণের কাজ নিয়ে রাজ্য সরকারকে এমনই নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
রবিবার জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি-সহ ছয় সদস্যের দল। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন লাগোয়া জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর অস্থায়ী আদালত ভবনের তিন তলায় একটি সভা ঘর তথা কনফারেন্স রুম তৈরির কথা রয়েছে। রাজ্যের তরফে ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।
গৌতমবাবু জানান, সভাঘরটি দ্বিতীয় পর্যায়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। যা শুনে প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “পরে নয়, একবারেই কাজ সেরে ফেলুন। দেরি করবেন না।” প্রতিনিধি দলে থাকা আর এক বিচারপতি নাদিরা পাথারিয়াকেও বলতে শোনা যায়, “দ্বিতীয় পর্যায় নয়, প্রথমবারেই সম্পূর্ণ করে দিন।” হাইকোর্টের এমন নির্দেশই দ্রুত জলপাইগুড়িতে বেঞ্চের কাজ শুরুর সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন আর এক বিচারপতি শহিদুল্লাহ মুন্সি, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (প্রোটোকল) শান্তনু ঝাঁ, রেজিস্ট্রার (পরিদর্শন) সুদেব মিত্র এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আধিকারিক বিভূতি খেসাং। এ দিন সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী আদালত ভবন, বিচারপতিদের আবাসন পরিদর্শন করেন প্রতিনিধি দলটি। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার অবশ্য মন্তব্য, “পরিদর্শন বললে ঠিক বোঝানো যাবে না। মাননীয় বিচারপতিরা তিন ঘণ্টা ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখেছেন। একটি ঘরও বাদ দেননি।”
এ দিনের পরিদর্শনে অস্থায়ী আদালত ভবনের চারটি বাতানুকূল এজলাসেই মাইক রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে, তাতে বিচারপ্রার্থীরা সকলেই শুনানি ভাল ভাবে শুনতে পারবেন। এজলাসের বাইরে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ডের ব্যবস্থা রাখতেও বলা হয়েছে। বোর্ডে কোন বিচারপতির এজলাসে কোন মামলা চলছে, তা ফুটে উঠবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন পরিদর্শনের পরে বড় ধরনের কোনও রদবদলের নির্দেশ দেয়নি হাইকোর্টের প্রতিনিধি দল। রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “চলতি মাসের শেষে ফের হাইকোর্টের প্রতিনিধিরা আসবেন। আজকে পরিদর্শনে বিচারপতি সহ হাইকোর্টের প্রতিনিধি দল সদর্থক মনোভাবের কথাই বুঝিয়েছেন। সার্কিটবেঞ্চ নিয়ে জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গবাসীর স্বপ্ন দ্রুত পূরণ হবে বলেই আমি আশাবাদী।”
তবে হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা প্রয়োজনের থেকে কিছু কম রয়েছে বলেও এ দিন আলোচনা হয়েছে। জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিনিধি দল বিচারপতিদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রধান বিচারপতি সহ অন্য মাননীয় বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। হাইকোর্টে এই মুহূর্তে যত জন বিচারপতি থাকার কথা তত জন নেই। চলতি মাসে কয়েকজন অবসরও নেবেন। অস্থায়ী পরিকাঠামোর কাজ শেষ হতে হতে বিচারপতিদের পদ পূরণ হয়ে গেলে অস্থায়ী পরিকাঠামোয় শুনানি শুরু হতে বাধা থাকবে না।”
জলপাইগুড়িতে তিস্তা ভবন, জুবলি পার্কে বিচারপতিদের অস্থায়ী আবাসনও ঘুরে দেখেছেন প্রধান বিচারপতিরা। সেখানেও কিছু রদবদলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে সব কাজ নিয়েই হাইকোর্টের নির্দেশ, দ্রুত সব কাজ শেষ করতে হবে।