কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের হাত থেকে পতাকা নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিল বংশীবদন বর্মণের দাদা সুদর্শন বর্মণ। ছবি - সুমন মণ্ডল।
গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বংশীবদন বর্মণের দাদা সুদর্শন যোগ দিলেন বিজেপিতে। বুধবার রাতে কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে নিজের বাড়ির অফিসে সুদর্শনের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্ৰতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। সুদর্শনের সঙ্গে আরও ৩৪ জন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বংশীবদন সরাসরি তৃণমূল না করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মুখ্যমন্ত্রী বংশীবদনকে রাজবংশী ভাষা অকাদেমির চেয়ারম্যান ও রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁর দাদা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন বংশীবদন। অস্বস্তিতে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা নেতৃত্বও।
তবে বংশীবদন বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতেই পারেন। যেমন সৌগত রায় তৃণমূলে রয়েছেন, আবার তথাগত রায় বিজেপিতে। ওঁরাও তো আপন দুই ভাই। আর আমরা রাজবংশী জনজাতির উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করি। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।’’ বংশীবদনের অনুগামীদের অবশ্য দাবি, বংশীবদনের দাদাকে বিজেপিতে সামিল করার পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। বংশীকে ‘হেয়’ করাই প্রধান লক্ষ্য। বংশীর দাদা সুদর্শন অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি একসময় কংগ্রেস করতাম। এখন মনে হচ্ছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে একমাত্র বিজেপি। তাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।’’ সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে একই ভাষার জন্য দুই অকাদেমি (রাজবংশী ভাষা অকাদেমি ও কমতাপুরি ভাষা অকাদেমি) তৈরি করেছেন তা তাঁর পছন্দ নয়। সেই কারণেই তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে রয়েছেন।
কোচবিহারে গ্রেটার সংগঠন একাধিক ভাগে বিভক্ত। তার মধ্যে দু’টি সংগঠনকে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হয়। একটি বংশীবদনের গ্রেটার, অন্যটি নগেন্দ্র রায় ওরফে অনন্ত মহারাজের গ্রেটার। অনন্ত এখন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। বংশীবদন আবার দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের ‘সখ্য’ হিসেবেই রয়েছেন। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সেই বংশীর দাদাকে দলে টেনে বিজেপি ‘মাস্টার স্ট্রোক’ দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বংশীবদনরা তিন ভাই, পাঁচ বোন। ভাইদের মধ্যে বংশী ছোট। বংশী ছাড়া তেমন ভাবে কেউই কখনও কোনও রাজনীতি বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বংশীবদনের অনুগামীদের দাবি, সুদর্শন অনেক বছর আগে কংগ্রেসে ছিলেন। তার পরে কোনও দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিলেন। তাঁকে ভুল বুঝিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়েছে বলে বংশীবদনের অনুগামীদের দাবি।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মণ বলেন, ‘‘প্রথমত এটা আমাদের কোনও দলীয় বিষয় নয়। দ্বিতীয়ত, যে কেউ যে কোনও রাজনৈতিক দল করতে পারেন। তৃতীয়ত, এটুকু বলতে পারি বিজেপি যাঁকেই যোগদান করাক না কেন, এ বারের লোকসভা ভোটে হার থেকে বাঁচতে পারবে না।’’
বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘কোথাও কোনও ষড়যন্ত্রের বিষয় নেই। অনেক মানুষ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্যে আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের অনেকে রয়েছেন। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হচ্ছে।’’
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, ‘‘যা তৃণমূল তাই বিজেপি। এই ঘটনা আবার তা প্রমাণ করল। সাধারণ মানুষকে এই দুই দলের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে।’’