Illegal Sand Mining

বালির অবৈধ ব্যবসা, প্রশ্ন শাসক-বিরোধী দু’শিবিরেই

মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের মদতে সিন্ডিকেট চলছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৫
Share:

বালাসন নদীর চরে এখানেই বালি তুলতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র

শিলিগুড়ির মাটিগাড়া ব্লক শুধু নয়, মহকুমার বাকি তিনটি ব্লকেও বেআইনি বালি-পাথরের ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ। শুধু বিরোধীরা নন, সোমবার মাটিগাড়ায় তিনটি প্রাণ চলে যাওয়ার পরে, শাসক দলের অনেকেও ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন, তাঁদের দলের ছাতার তলায় বালি-পাথরের ব্যবসা করে ফুলেফেঁপে উঠছে অনেকে। অনেকে আড়ালে লোক দিয়ে চালাচ্ছে বালির ব্যবসা। অভিযান, ধরপাকড় হলে কিছু দিন চুপচাপ। তার পরে, আবার শুরু। পুলিশ-প্রশাসন-ভূমি সংস্কার দফতর দেখেও না দেখার ভান করে বলে অভিযোগও রয়েছে। ট্রাক-ট্রাক্টর নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগারের সহজ পথ এই নদী খনন— এমন ভাবনাই চালু রয়েছে।

Advertisement

মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের মদতে সিন্ডিকেট চলছে। পুলিশ-প্রশাসন সব জেনে চুপচাপ বসে থাকে। এর জন্য তিনটি প্রাণ গেল। গোটা মহকুমায় রাত হলেই নদীখাতে ডাম্পার, ট্রাক, ট্রাক্টরের দাপাদাপি শুরু হয়।’’ প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘সবার নাকের ঢগায় বালি চুরি চলছে। তিন জনের মৃত্যুর দায় পুলিশ-প্রশাসনকেই নিতে হবে।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, মহকুমার চারটি ব্লকের নদীগুলি থেকে বালি-পাথর তোলার অনুমতি আপাতত বন্ধ রয়েছে। অন্তত পক্ষে ৩০টি ঘাটে নতুন করে লিজ় দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কোনও কোনও সময়ে সরকারি বরাতের মালপত্র কেবল সরবরাহ হয়। এই সুযোগে মহানন্দা, বালাসন, ডুমুরিয়া, মাঞ্ঝা বা মেচি নদীতে বালি মাফিয়ারা সক্রিয় বলে অভিযোগ। এর বাইরে, মহকুমার বিভিন্ন চা বাগিচা ও বস্তি, জঙ্গল লাগোয়া ছোট ঝোরা, নদী থেকেও বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, নকশালবাড়ির বেলগাছি চা বাগান এবং জাবরা বাগানের চে‌ঙ্গা নদী থেকে বালি তোলা হয়। অটল চা বাগানের চেঙ্গা নদী, মেচি নদীর রকমজোত, নিউ চামটা, গুলমা, বালাসনের পুটিনবাড়ি এবং এমএম তরাই চা বাগান থেকে বেআইনি ভাবে বালি তোলা চলে বলে অভি‌যোগ। মাটিগাড়ার তারাবাড়ি, কলমজোত, রানাবস্তি, কাওয়াখালি, খাপরাইল, পাথরঘাটার মতো এলাকায় বেআইনি বালির কারবার সব চেয়ে বেশি চলছে বলে অভিযোগ। সাধারণ সময়ে যদি ছোট ট্রাকে (৪০ ঘনফুট) বালির দাম হয় তিন হাজার টাকা, সুযোগ বুঝে সে পরিমাণ বালির দাম অনেক সময় চাওয়া হয় প্রায় আট থেকে ন’হাজার টাকা।

Advertisement

স্থানীয় বাজারে প্রায় তিন গুণ চড়া দামে বিক্রি করা ছাড়াও বিহারে ডাম্পারে করে বালি পাচার হচ্ছে। অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে চলা এই পাচারের খবর প্রশাসনের কাছে থাকলেও উপযুক্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পুলিশ-প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের একাংশের মদতে ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করে বালি মাফিয়ারা কাজ করছে বলে অভিযোগ। বালাসন সেতু বসে যাওয়ার পিছনে পিলারের তলা থেকে বিপজ্জনক ভাবে বালি-পাথর তোলার ঘটনাও সামনে এসেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত স্তর থেকে শাসক দলের নেতাদের হাত মাথায় না থাকলে বালি খাদানের এই ব্যবস্থা চলতে পারত না।

যদিও তৃণমূলের সমতলের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ এ দিন বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের কিছুটা দায় তো থেকেই যায় এমন ঘটনায়। আমরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য বলেছি। তবে এর মধ্যে দলের কোনওভূমিকা নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement