মালদহে বোমাতঙ্কের কথা স্মৃতির ভাষণেও

পরিত্যক্ত স্কুলব্যাগ উদ্ধারকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়াল মালদহের ইংরেজবাজার শহরে। আর বিজেপির হয়ে প্রচারে এসে সেই আতঙ্ক দিয়েই শাসক দলকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। যে ব্যাগ ঘিরে এত কাণ্ড, তা থেকে অবশ্য মিলেছে জামা-প্যান্ট!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২১
Share:

মালদহের ফোয়ারা মোড়ে পরিত্যক্ত ব্যাগ পরীক্ষা করছেন বম্ব স্কোয়াডের কর্মী।—নিজস্ব চিত্র।

পরিত্যক্ত স্কুলব্যাগ উদ্ধারকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়াল মালদহের ইংরেজবাজার শহরে। আর বিজেপির হয়ে প্রচারে এসে সেই আতঙ্ক দিয়েই শাসক দলকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। যে ব্যাগ ঘিরে এত কাণ্ড, তা থেকে অবশ্য মিলেছে জামা-প্যান্ট!

Advertisement

এর আগে রাজ্যে প্রচারে এসে ‘বোমা শিল্প চলছে’ বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন মালদহে এসে দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে বোমাতঙ্কের খবর পেয়ে তাই তৃণমূলকে আক্রমণের সুযোগ ছাড়েননি স্মৃতি। মোদীর সুরেই তিনি বলেন, ‘‘মালদহের পা রাখা মাত্র বোম দিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে। এই হচ্ছে রাজ্যের বর্তমান অবস্থা!’’

এ দিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ ইংরেজবাজার শহরের পোস্ট অফিস মোড়ের ট্রাফিক সিগন্যালের পাশে একটি স্কুল ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বেলা ১১টা পর্যন্ত সেটি কেউ না নিয়ে গেলে তাঁরা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের পুরো বিষয়টি জানান। ইংরেজবাজার থানায় জানালো হলে প্রায় এক ঘণ্টা বাদে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ ও বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা। পোস্ট অফিস মোড়ের চারদিকে ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়। অবরুদ্ধ হয়ে যায় শহরের এই প্রাণকেন্দ্র। শহর জুড়ে যানজট বেধে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দমকলের একটি ইঞ্জিন। যার ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দুপুর ১টা নাগাদ বম্ব স্কোয়াডের সদস্যরা তাদের পোশাক পরে ওই ব্যাগটি একটি বাক্সতে বন্দি করে লক্ষ্মীপুরের একটি নির্জন আম বাগানে। সেখানেই খোলা হয় ব্যাগটি। তা থেকে উদ্ধার হয় দুটি করে জামা প্যান্ট। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সকলে। ইতিমধ্যে, পোস্ট অফিস থেকে মাত্র ঢিল ছোড়া দূরত্বে বৃন্দাবনী মাঠে দুপুর আড়াটে নাগাদ নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে আসেন স্মৃতি। ইংরেজবাজারের মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘আগে বাংলার সংস্কৃতির জন্য সুনাম ছিল। এখন বোমার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। বোমা দিয়ে মালদহে স্বাগত জানানো হচ্ছে, এমনই অবস্থা হয়ে উঠেছে রাজ্যের। এ ছাড়া জালনোট, আফিম চাষেও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে রাজ্য। রাজ্যের মা মাটি আর মানুষ আজ বিপন্ন। রাজ্যে কোন উন্নয়ন হয়নি। শিল্প না থাকায় বেকার যুবকেরা কাজ পাচ্ছে না।’’ তৃণমূলকে কটাক্ষ করার পাশাপাশি বাম কংগ্রেস জোটকেও কটাক্ষ করেছেন স্মৃতি দেবী। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতা দখলের জন্য দুই দল নীতি বির্সজন দিয়ে জোট বেধেছে। এই বাম কংগ্রেস জোট ৬০ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলেও কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাই কেন্দ্রের মতো রাজ্যের উন্নয়নের জন্য দরকার বিজেপি।’’ এ দিন বিজেপির সভায় অর্ধেক মাঠই ভরেনি। তবে দলীয় নেতৃত্বের দাবি, এক দিনের নোটিসেই হাজার তিনেক মানুষের ভিড় হয়েছিল।

Advertisement

তবে ব্যাগ থেকে জামাকাপড় মেলার খবর মিলতেই স্মৃতিদেবীর সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূল। তাঁদের কথায়, ‘‘বিজেপি নেতানেত্রীরা এখন রাস্তায় কিছু পড়ে থাকলেই বোমা ভাবছেন। আর রাজ্যের নামে দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।’’ এ বিষয়ে ইংরেজবাজারের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘স্মৃতি ইরানি এ দিন যা বক্তব্য রেখেছেন তা খুবই হাস্যকর ব্যাপার। তাঁরা শুধু রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেন। আর এদিনের সভায় লোক না হওয়ায় হতাশায় এমন বক্তব্য করে থাকতে পারেন তিনি। স্মৃতি ইরানির বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতৃত্বরাও।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘বিজেপি নেত্রীর এমন বক্তব্যে মানুষ হাসছেন। আর হয়তো উনার কাছে সঠিক তথ্য ছিল না যে ব্যাগে কী পাওয়া গিয়েছে। তাহলে তিনিও হাসতেন।

তবে বোমা না মিললেও আতঙ্কের জেরে প্রশাসনকে বিঁধেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। দলের সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবতী বলেন, ‘‘একটি ব্যাগ ঘণ্টা চারেক ধরে পড়ে থাকলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করল না। চক্রান্ত করে আমাদের সভা বানচাল করার জন্য বিরোধীরা এই আতঙ্ক ছড়িয়ে থাকতে পারে। আমরা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’ এই বিষয়ে মালদহের পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা বলেন, একটি ব্যাগকে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। বোম স্কোয়াডের সদস্যেরা গিয়ে ব্যাগটি উদ্ধার করেছে। ওই ব্যাগে জামা কাপড় পাওয়া গিয়েছে। ব্যাগের মালিকের খোঁজ চালানো হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement