দলবেঁধে: চূড়াভাণ্ডারে ফসলের খেতের মধ্যে দিয়েই সভাস্থলের দিকে জনতা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
সবে সবুজ পাতা লকলক করতে শুরু করেছিল গাছে। একের পর এক পা মাড়িয়ে দিয়ে গেল ভুট্টার সে সব কচি চারাগাছ।
সদ্য বোনা হয়েছিল আলুর বীজ। গ্রামের ভাষায় আলুর খেতকে বলা হয় আলুবাড়ি। মোদীর সভায় যাওয়া ভিড় তছনছ করে দিয়েছে সেই আলুবাড়িও। তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।
প্রায় ৯৬ বিঘা চষা জমি ক্ষতিপূরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভার জন্য নিয়েছিল বিজেপি। সভার দিন আশেপাশের কয়েকশো বিঘা জমির শস্য ভিড়ের চাপে নষ্ট করে দিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের কেউ কেউ সভা চলাকালীনই বিজেপি নেতাদের কাছে ক্ষোভ জানিয়েছেন। সে খবর পৌঁছেছে রাজ্য নেতাদের কানেও।। মোদী সভায় আসার আগে বক্তব্য রাখার সময়ে রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘আশপাশের যাঁরা আমাদের জমি ব্যবহারের অনুমতি দেননি, তাঁরা দুশ্চিন্তা করবেন না। আমরা তৃণমূলের মতো নই, কৃষকদের ক্ষতিপুরণ দিয়ে দেব।’’ রাহুল দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের জন্য একাধিক প্রকল্প এনেছে। কৃষকদের মনে দুঃখ দিয়ে বিজেপি সভা করবে না বলেও দাবি করেন রাহুল সিংহ।
এ দিন মোদী অবশ্য কৃষকদের নিয়ে বিশেষ কিছু বলেননি। তবে চূড়াভাণ্ডারের যে কৃষকরা বিজেপিকে সভার অনুমতি দিয়েছিলেন, মাথায় হাত তাঁদেরও। মোদীর সভার পরে জমিতে পাট বুনবেন বলে স্থির করেছিলেন বিভূতি বর্মণ। সভার আগের দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত যা জমির যা অবস্থা হয়েছে তাতে সে আশা ঘুচে গিয়েছে বলে দাবি তাঁর। মাঠে রোলার নামানো হয়েছে। হেলিপ্যাডের কংক্রিট মাঠে চাপা দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি বাসিন্দাদের। কেটে দেওয়া হয়েছে আল। বিভূতিবাবু বললেন, ‘‘এমনটা তো কথা ছিল না। মাঠের সর্বনাশ হয়ে গেল। আমি, আমার দাদা কেউ এই মরসুমে পাট চাষ করতে পারব না। পরের বার ধান বুনতে পারব কি না তাও সন্দেহ।’’
সভামঞ্চের ডানদিকে ছিল সারি সারি ভুট্টাখেত, বাঁ দিকে আলুখেত। সভায় আসা কর্মী-সমর্থকেরা জাতীয় সড়ক থেকে নেমে আল খেত মাড়িয়ে সভায় ঢুকেছেন। ফিরতি পথেও একই ঘটেছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। জ্যোৎস্না রায়, অমল মণ্ডলদের দাবি, ‘‘আমাদের খেত তো সভার জন্য দিইনি। সভাস্থল থেকে অনেক দূরে খেত। তবু সবাই মাড়িয়ে দিল। প্রতিদিন কত সময় দিয়ে যত্ন দিয়ে গাছগুলি বড় করেছি। এ সবের ক্ষতিপূরণ হয় নাকি!"