প্রতীকী ছবি।
অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি
জনবসতি এলাকায় নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছিল মঙ্গলবার রাতে। প্রশাসন থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করে মঙ্গলবার রাতে। সেই রাতেই তৃণমূল নেতা-নেত্রী, জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে যান। বুধবার সকাল থেকে জেলা তৃণমূল সভাপতি সহ দলের সব সংগঠনের নেতা-নেত্রীরা জলবন্দি এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের খোঁজখবর শুরু করেন। অন্য দিকে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিজেপির অন্দরে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খেয়েছে, সেটি হল “আমাদের নেতারা কোথায় গেলেন?”
দুপুরের পরে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় এবং ময়নাগুড়ির বিধায়ক কৌশিক রায় ময়নাগুড়ির কয়েকটি গ্রামে উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখেন। যদিও বুধবার সকালে যখন আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং জেলা বন্যা-ধসে বিপর্যস্ত, সে সময়ে বাগডোগরা থেকে দিল্লির উড়ান ধরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। গত মঙ্গলবার খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁর বিমান উড়তে পারেননি। বুধবার সকালেই তিনি রওনা হন। ততক্ষণে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় জাতীয় সড়কের ওপরে বালাসন সেতু প্রবল জলের তোড়ে বসে যেতে শুরু করেছে। যান চলাচল বন্ধও। সেই সেতুর কিছুটা দূর দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয় চলে গেছে বিমানবন্দরে।
জলপাইগুড়ির তিনটি ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়, জলবন্দি হয়ে পড়েন কয়েক হাজার বাসিন্দা। রাত থেকে যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়-সহ দলের অন্য প্রতিনিধিরা দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনে যান। জেলা তৃণমূল সভাপতি মহুয়া গোপ নিজেই কালিম্পঙে গিয়ে আটকে পড়েছেন। অন্য দিকে বিজেপি সূত্রের দাবি, সাংসদ দিনহাটায় ভোট প্রচারে ‘ব্যস্ত’ থাকায় পৌঁছতে কিছুটা দেরি হয়।
বেলা গড়িয়ে এ দিন বিকেলে বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তের একটা চিঠিও সমাজমাধ্যমে দেখা গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা সেই চিঠিতে পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। এর বাইরে বিজেপির জলপাইগুড়ি বা দার্জিলিং জেলার কোনও জনপ্রতিনিধিকে এ দিন দুর্গত এলাকায় দেখা যায়নি। তা নিয়ে দলের অন্দরেই একাংশ নেতা-কর্মী প্রশ্ন তুলেছেন।
শিলিগুড়ি পুরসভা গত মঙ্গলবার রাতেই কন্ট্রোল রুম খোলে। তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন তৃণমূলের রঞ্জন সরকার। শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন গৌতম দেব শিলিগুড়ির বিপর্যস্ত এলাকাগুলিতে গিয়েছিলেন। সেখানে দলের নেতাদের ‘অনুপস্থিতি’ বা দেরিতে পৌঁছনো বিরূপ বার্তা দেবে বলে দাবি করছেন বিজেপি নেতারাই।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বিজেপির সিকিম ইউনিট বিপন্নদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছেন। যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁর দেহ সিকিম মনিপাল মেডিক্যাল কলেজে রাখা আছে।’’ শিলিগুড়িতে তাঁদের বিধায়করা আছেন বলেও জানান সুকান্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের দেখা নেই কেন? সুকান্তর জবাব, “উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি আরও সাঙ্ঘাতিক। আমরা চাই না, এখানেও তেমন পরিস্থিতি হোক। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আসবেন।’’