যত কাণ্ড কোচবিহারে

এ বার গুলি বিজেপির সমর্থককে

বাম সমর্থক নিহত হওয়ার বারো ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিজেপির এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হলেন। রবিবার রাত ১০টা নাগাদ কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার চান্দামারি এলাকায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই বিজেপি কর্মীকে রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০১:৪২
Share:

আক্রান্ত: চান্দামারিতে গুলিতে আহত নারায়ণ সরকার। কোচবিহার হাসপাতালে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

বাম সমর্থক নিহত হওয়ার বারো ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বিজেপির এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হলেন। রবিবার রাত ১০টা নাগাদ কোচবিহারের কোতোয়ালি থানার চান্দামারি এলাকায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই বিজেপি কর্মীকে রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাম নারায়ণ সরকার। বাড়ি ওই এলাকাতে। নারায়ণবাবুকে রাতেই কোচবিহার হাসপাতাল থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। এক্ষেত্রেও অভিযোগের তির শাসক দল তৃণমূলের দিকে। যদিও তৃণমূল ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Advertisement

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, নারায়ণবাবুর আত্মীয় নগরবাসী সরকার গাঁজার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। একাধিক বার তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর কাছে থাকা বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র থেকেই কোনও ভাবে ওই গুলি চলে। নগরবাসীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।”

রবিবার দুপুরে মেখলিগঞ্জের জামালদহে তৃণমূল ও বাম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে রমজান আলি নামে এক সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়। জখম হন দুই পক্ষের ১৯ জন। তাঁদের মধ্যে এক বাম সমর্থকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Advertisement

ওই ঘটনায় পুলিশ দুই পক্ষের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। তৃণমূল অবশ্য ওই ঘটনাতেও রাজনীতি নেই বলে দাবি করেছে। তৃণমূলের দাবি, রেলের মাটি সরবরাহের ঠিকাদারি নিয়ে দুই ঠিকাদারের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে ওই ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “জামালদহে রেলের ঠিকাদারি নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে। চান্দামারির ঘটনাতেও রাজনীতির কোনও যোগ নেই। বাম ও বিজেপি পঞ্চায়েত ভোটে হেরে গিয়ে মিথ্যে অভিযোগ তুলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।”

হিংসার হিসেব

• সংঘর্ষ ২৫ • জখম ১২০

মৃত ৬ জন

• ১২ এপ্রিল: আবু মিয়াঁ (তৃণমূল)। বাড়ি গীতালদহে।

• ২০ এপ্রিল: বাবলু সরকার (তৃণমূল)। বাড়ি ফুলবাড়ি।

• ১৪ মে: দুলাল ভৌমিক (কংগ্রেস দাবি করে তাদের কর্মী)। বাড়ি গোপালপুরে।

• ১৫ মে: জিন্নাতুল হক (তৃণমূল) বাড়ি কোতোয়ালি থানার সুটকাবাড়ি।

• ১৫ মে: শুভ্রকুমার দে (ভোটকর্মী) দিনহাটার বাসিন্দা।

• ৩ জুন: রমজান মিয়াঁ (সিপিএম)-বাড়ি জামালদহে।

গুলিবিদ্ধ

• ২৬ মার্চ: ফারুক আবদুল্লা (তৃণমূল)। বাড়ি গীতালদহে।

• ৫ এপ্রিল: মাফুজার রহমান (তৃণমূল)। বাড়ি গীতালদহে।

• ১৩ মে: নারুল হক (তৃণমূল)। বাড়ি রাখালমারি।

• ৩ জুন: নারায়ণ সরকার (বিজেপি)। বাড়ি চান্দামারি।

বোমায় জখম

• ৬ মে: আজিজার রহমান (তৃণমূল)। বাড়ি দিনহাটার ওকরাবাড়ি। এ ছাড়া আরও ১।

কার কত জখম

• তৃণমূল ৬০

• বিজেপি ৪০

• বাম ২০

বিজেপির জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে-র দাবি, ‘‘নগরবাসীবাবুর স্ত্রী পুষ্পদেবী আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য। ওই পঞ্চায়েতে অনেক বাধার পরেও একটি আসনে আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম। তিনি জয়ী হন। ওই বাড়িতে রবিবার লোকনাথ পুজো ছিল। প্রসাদ নিতে গিয়েছিল নগরবাবুর খুড়তুতো ভাই নারায়ণ। সেই সময় গুলি চলে।’’ তিনি বলেন, “অনেকদিন ধরেই ওই পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। নগরবাসীকে লক্ষ করেই গুলি চালানো হয়েছিল বলে সন্দেহ। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তা নয়নবাবুর মুখে লাগে।”

পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে একের পর এক গণ্ডগোলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোচবিহার। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশ পঞ্চায়েত নির্বাচনের শুরু থেকেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বহু অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ জন্যেই শাসক দলের কর্মীরা বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। সিপিএমের অনন্ত রায় বলেন, “পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে এ ভাবে মৃত্যু ও জখমের ঘটনা বেড়ে চলত না।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” প্রত্যেকটি মামলাতেই অধিকাংশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তৃণমূলেরও দাবি, বিরোধীরা ভুল অভিযোগ করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement