প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলিপুদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। দু’দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কয়েক মিনিটের সাক্ষাতেও একই প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ জানান বিজেপির সাংসদরা।
মঙ্গলবার বিহারের আড়ারিয়ায় ভোট প্রচারে যান প্রধানমন্ত্রী। তার আগে তিনি নামেন বাগডোগরায়। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে বিহারে চলে যান তিনি। মাঝের দশ মিনিটে তিনি দেখা করে অভ্যর্থনাকারীদের সঙ্গে। সেই দলে ছিলেন বিজেপির পাঁচ সাংসদ, রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেব, বিজেপির তিন নেতা, দার্জিলিঙের জেলাশাসক ও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার।
পরে সেখানে উপস্থিত আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে এসে জানতে চান, সব কেমন চলছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ভাল চলছে না।’’ অন্য সাংসদ এবং দলের নেতারাও অনেকে রাজ্যের বিরুদ্ধে জানান। সেখানে ছিলেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, কোচবিহারের সাংসদ নিথীথ প্রমাণিক, জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ও। ছিলেন বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি প্রবীণ আগরওয়াল, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু এবং সহ-সভাপতি দীপেন প্রমাণিক।
বিজেপি সূত্রে খবর, বার্লার সঙ্গে সুর মিলিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ সুকান্ত এবং প্রবীণ আগরওয়ালও সরব হন। বালুরঘাটের সাংসদের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, সব কেমন চলছে? জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমরা লড়াই করছি।’’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘লড়ে যাও।’’ সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ভোটে জিততে হবে। সুকান্ত জানান, উত্তরবঙ্গ পিছিয়ে পড়া এলাকা। উন্নয়ন নেই। উন্নয়নের রোড ম্যাপ করে কাজ করা দরকার। সাংসদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘রাজ্যের ব্যাপার তো আপনারা জানেন। আগামী দিনে সরকার পরিবর্তন হবে। এবং আমরা রোড ম্যাপ করে উন্নয়ন করব।’’
কোচবিহারের সাংসদ নীশিথ প্রমাণিক জানান, প্রধানমন্ত্রী ভাল করে কাজ করে যাওয়ার কথা বলেছেন তাঁকে। তাঁর পিঠও চাপড়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী পিঠ চাপড়ে দেন রথীনবাবুরও। রথীন বলেন, ‘‘প্রধামন্ত্রীকে জানিয়েছি, ২০১৩ সাল থেকে তাঁকে দেখছি। তাঁর কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। আগামী বিধানসভায় আমরা রাজ্য দখল করব।’’ বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা নজর রাখছেন।’’
লাইনে সকলের আগে ছিলেন গৌতম দেব। তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য বিনিময় হয়। গৌতম পরে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দলের সাংসদ, নেতাদের সঙ্গেও সৌজন্য বিনিময় করেছেন। আমি দেখলাম, দার্জিলিঙের জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। তার পর পুলিশ কমাশনারের সঙ্গে কথা বলেন।’’ রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি নেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে পর্যটনমন্ত্রী কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ মিনিট কথা বলার মধ্যে তিন মিনিটই জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে কথা বলেছেন।’’ পরে জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সফর। নিয়ম মেনেই সেখানে থাকতে হয়। তেমন কোনও কথা হয়নি।’’ তবে সাংসদদের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অভিযোগ শোনার পরে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে এই দু’জনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্টমহল।