গাছ ভর্তি আমের সঙ্গে নিজস্বী দিলীপের। নিজস্ব চিত্র।
মালদহের জনসভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ অধীর চোধুরীকে ‘বিজেপির এজেন্ট’ বলে আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সেই মালদহেই অধীরের ‘পাশে’ দাঁড়িয়ে, নাম না করে অভিষেককে পাল্টা আক্রমণ করলেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ-সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। এ দিন সকালে ইংরেজবাজারের গোপালপুরে দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “অধীরের মতো নেতাকে দু’দিনের ছোঁড়ার মুখে সমালোচনা মানায় না। অধীর চৌধুরী, ডালুবাবুরা (আবু হাসেম খান চৌধুরী) বিজেপির সঙ্গে কখনও হাত মেলাননি।” তৃণমূলই বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন দিলীপ।
এ প্রসঙ্গে অভিষেকের নাম না টেনে সোমবার অধীর চোধুরী বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ‘সখ্যতা’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের সবাই জানেন, বিজেপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির সঙ্গে জোট করে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন করেছিলেন মমতা। বিজেপির আমলে গুজরাত দাঙ্গায় যাঁর নাম জুড়ে যায়, সেই নরেন্দ্র মোদীকে ফুলের মালা পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০০৩ সালে দিল্লিতে আরএসএসের সম্মেলনে যোগ দিয়ে আরএসএসকে ‘দেশপ্রেমী ও বন্ধু’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল।’’ তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে আরএসএসের শাখা সংগঠন ছিল সাড়ে তিনশোটি। এখন হয়েছে চার হাজার। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ধনখড়ের বিরোধিতা না করা এবং নাগরিক আইনে সংসদে তৃণমূলের ভোট না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলেও মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন অধীর।
তাঁর পাশে দিলীপ ঘোষের দাঁড়ানো প্রসঙ্গে অধীরের বক্তব্য, ‘‘তাঁর (দিলীপ ঘোষের) মতামত নিয়ে আমি কী বলব। উনি যা জানেন, বলেছেন। এত দিন তৃণমূল-বিজেপি সম্পর্ক নিয়ে আমি যা বলে এসেছি, এ দিন দিলীপ ঘোষ সেটাই বলেছেন। আসলে সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় সংখ্যালঘুদের পক্ষে আনার জন্য তৃণমূলের তত্ত্ব হল ‘বিজেপি বিজেপি’ করা। সংখ্যালঘু-প্রধান জেলায় তৃণমূল সে তত্ত্ব খাড়া করে বিভ্রান্তি ছড়ায়।’’
কংগ্রেস, বিজেপিকে এক যোগে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী। তিনি বলেন, “বাম, কংগ্রেস, বিজেপি মিলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রামধনু জোট করেছে। সে কারণে, অধীর চৌধুরী আর দিলীপ ঘোষদের ভাষা এক। তাঁরা একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।” কংগ্রেস নেতা ইশা খান চৌধুরী বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন। মানুষ এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। মানুষকেও তৃণমূল-বিরোধী মনে করছেন তিনি। আর মানুষের ভাষাই তো বিরোধীদের ভাষা। তা তো এক হবেই।’’
রবিবার মালদহের সংখ্যালঘু প্রধান এলাকা কালিয়াচকের সুজাপুরে জনসভা করেন অভিষেক। তিনি কংগ্রেসের ‘ঘাঁটিতে’ গিয়ে অধীররঞ্জন চৌধুরী, আবু হাসেম খান চৌধুরীকে তাঁর ভাষণে আক্রমণ করেন। সে সভার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলায় আসেন দিলীপ ঘোষ। এ দিন সকালে বৃষ্টির জন্য পুরাতন মালদহের ছাতিয়ান মোড়ে তাঁর নির্বাচনী প্রচার ব্যাহত হয়। পরে, বৃষ্টির মধ্যেই ইংরেজবাজার, কাজিগ্রাম, কালিয়াচকে নির্বাচনী প্রচার করেন তিনি।
রাতে কোতোয়ালিতে দিলীপের সভা ছিল। যদিও দলের দক্ষিণ মালদহের সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “বৃষ্টির জন্য কোতোয়ালিতে দিলীপদার সভা বাতিল করা হয়েছে।’’