বিপ্লব মিত্র।
গত প্রায় দু’দশক ধরে জেলা তৃণমূলের ‘অবিসংবাদী’ নেতা ছিলেন তিনি। জেলা সভাপতি হিসেবে পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের প্রত্যেক নেতার কাছে ‘মেজদা’ হিসেবে পরিচিত সেই বিপ্লব মিত্র এখন সেই দলের কাছেই প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ, তিনি এখন বিজেপি শিবিরে।
ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ হিসেবে এবং পুরনো দল তৃণমূলের সংগঠনকে নিজের হাতের তালুর মতো চেনার সুবাদে আসন্ন পুরভোটে তিনি ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠবেন কিনা, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের বর্তমান জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল দল কোনও ব্যক্তির দ্বারা চলে না। এখানে এক জন মূল। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এখানে সিএম (মুখ্যমন্ত্রী) নন, বিএম ( বিপ্লব মিত্র) সব কিছু, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই৷ উনি কোনও প্রভাবই ফেলতে পারবেন না।’’
দলের অন্দরমহলের খবর, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে জেলায় দলের সভাপতির পদ সামলানো বিপ্লবের নেতৃত্বে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ছ’টির মধ্যে পাঁচটি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে অর্পিতা ঘোষকে জিতিয়ে সাংসদ করা হয়। এর পরে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে’ দলের সাংগঠনিক শক্তি কিছুটা কমলেও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে দু’টি আসন ধরে রেখেছিল তৃণমূল। গঙ্গারামপুর পুরসভা নির্বাচনে ১৮টি ওয়ার্ডেই জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুরবোর্ড গঠন করে তৃণমূল। পুরপ্রধান হন বিপ্লবের ভাই প্রশান্ত মিত্র।
দলীয় সূত্রে খবর, এই অবস্থায় গত লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে অর্পিতার সঙ্গে বিপ্লবের ‘মতানৈক্যের’ জেরে নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার নেয়। তৃণমূলের অভিযোগ, বিপ্লব প্রার্থী হতে না পারায় ভোটের সময় জেলা সভাপতির দায়িত্বে থেকেও সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হওয়ায় বিজেপির জয়ের পথ সুগম হয়। ভোট মিটতেই বিপ্লব দল ছেড়ে বিজেপিতে শামিল হন।
তৃণমূলের অন্দরমহলের কানাঘুষো, বিজেপিতে যোগ দিলেও তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী এখনও ‘মেজদার’ সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা থাকায় আসন্ন পুরভোটে গঙ্গারামপুর পুরসভায় বিপ্লবই ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠবে বলে তাদের ধারণা।
আসন্ন পুরভোটে গঙ্গারামপুরের নির্নায়ক শক্তি যে তিনি হতে পারেন, আড়ালে তা মানছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। এ নিয়ে বিপ্লবের বক্তব্য জানতে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিপ্লব ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘মেজদা যে দিকে থাকবে ভোটের ফল সে দিকেই যাবে।’’