স্নেহ: শিশুদের সোয়েটার কিনে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দার্জিলিঙে। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজ, বুধবার প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হচ্ছে পাহাড়। সেজন্য মঙ্গলবার সকাল থেকেই তৃণমূল এবং মোর্চার পতাকা, পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে যায় পাহাড়ের রাস্তা। মিছিলের আগের দিন, মঙ্গলবার পাহাড়ি পথে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েও এনআরসি নিয়ে বাসিন্দাদের অভয় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন সকালে রিচমন্ড হিলের বাংলো থেকে বেরিয়ে হেঁটে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা পর্যন্ত যান। পথে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের দেখে নমস্কারও করেন তিনি। অনেকেই এগিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। কয়েকজন সাহস করে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং নতুন নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে তাঁরা কেউ নন। মুখ্যমন্ত্রী হাসিমুখে তাঁদের অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘‘ভয় পাবেন না। আপনাদের জন্য আমি রয়েছি।’’ তাঁদের আশ্বস্ত করে চকবাজার ট্যাক্সি স্ট্যান্ড হয়ে হাঁটাপথেই সিঙ্গিমারি দিয়ে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যান তিনি।
আজ মিছিলে হাঁটার কথা মোর্চার সভাপতি বিনয় তামাং, জিটিএ’র চেয়ারম্যান অনীত থাপাদেরও। মিছিলের পরদিন, ২৩ জানুয়ারি দার্জিলিঙে নেতাজির জন্মজয়ন্তীর সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বিজেপির বিধায়ক নীরজ জিম্বা এবং বিজেপিরই সাংসদ রাজু বিস্তাকেও আমন্ত্রণ করা হয়ছে। নীরজ জানান, জেলাশাসকের দফতর থেকে বিধায়ক-সাংসদ সকলকেই আমন্ত্রণের কথা জানানো হয়েছে। তবে এখনও তিনি আমন্ত্রণপত্র পাননি।
সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি সভা থেকে এনআরসি এবং সিএএ বিরোধিতার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৩ জানুয়ারির মঞ্চ থেকে কী বার্তা দেবেন, সেই দিকেও তাকিয়ে পাহাড়বাসী। আজ মিছিলে অন্তত ১৫ হাজার বাসিন্দা মিছিলে শামিল করানো হবে বলে মোর্চা এবং তৃণমূলের দাবি। বিমল গুরুং এবং তার অনুগামীদের নেতৃত্বে একশো দিনেরও বেশি টানা বন্ধ ও আন্দোলনের জেরে পাহাড় অশান্ত হয়ে ওঠে এক সময়। তা সামলাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। ২০১৮ সাল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে বিমলের অনুপস্থিতিতে শেষ লোকসভা ভোটেও তৃণমূলকে নিরাশ করেছে পাহাড়। এই পরিস্থিতিতে এনআরসি এবং সিএএ বিরোধিতায় পাহাড়ে হারানো জমি খুঁজতে তৎপর তৃণমূল। এই নিয়ে পাহাড়ের বাসিন্দাদের অনেকেই যে আতঙ্কে, সে-কথাও অনেকে জানিয়েছেন। পরিস্থিতি আঁচ করে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও পাহাড়বাসীকে এনআরসি’র আওতার বাইরে রাখার আর্জি জানিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে সচেষ্ট হন। তবে কেন্দ্রের তরফে সদর্থক সাড়া মেলেনি বলে খবর।
আজ মিছিলের পর মোটরস্ট্যান্ডে সভার কর্মসূচি আছে। বিনয় এ দিন বলেন, ‘‘বড় মিছিল হবে। পাহাড়ের বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ তাতে শামিল হবেন।’’ ইতিমধ্যে দার্জিলিং মোটরস্ট্যান্ড থেকে কার্শিয়াং মোটরস্ট্যান্ড এবং কার্শিয়াং থেকে সমতল পর্যন্ত মিছিল করেন বিনয়-অনুগামী মোর্চার সমর্থকেরা। বিনয় এবং অনীতেরাও মিছিলে হেঁটেছেন। মোর্চা এবং তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভানু ভবন থেকে রবার্টসন রোড, গাঁধী রোড, জাতীয় সড়ক হয়ে মোটর স্ট্যান্ডে আসবে মিছিল। সেখানে সভার আয়োজনও রয়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও শামিল হবেন মিছিলে।
বিজেপির রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু বলেন, ‘‘তৃণমূল মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। সরকারি সুবিধা ব্যবহার করে অবৈধ কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রীর নাটক আর মানুষ দেখতে চাইছে না।’’