আপার ফাগুর সভায় গুরুঙ্গ। — নিজস্ব চিত্র
কালিম্পঙের পথে-পথে উৎসবের আমেজ। সেবক থেকে শুরু করে তিস্তা বাজার, চিত্রে, আলগাড়া, লাভা-লোলেগাঁও অবধি নতুন জেলা প্রাপ্তির জন্য চলছে নানা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। কোথাও লায়ন ড্যান্সের মহড়া চলছে। কোথাও লেপচা প্রথা মেনে ‘কিংসুক ডারমিট’ অর্থাৎ সৌভাগ্যের দেবী শিরোপায় ভূষিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি চলছে। গভীর রাত পর্যন্ত পাহাড়ি পথে ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুন টাঙানোর প্রতিযোগিতাও দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যেন জাগছে কালিম্পং।
তাতে কিছুটা হলেও অস্বস্তির ছাপ পাহাড়ের শাসক তথা জিটিএতে ক্ষমতাসীন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের অনেকেই। কারণ, জেলা নিয়ে মাতামাতিতে তাদের দলের অনেককেই মেতে উঠতে দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামতে হয়েছে দলের সভাপতি তথা জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গকে। তাই শনিবার কালিম্পঙের গরুবাথানের আপার ফাগুতে গিয়ে একগুচ্ছ শিলান্যাস ও প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন গুরুঙ্গ। পৃথক জেলা ঘোষণার অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন না বলেও জানিয়ে দেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, ‘‘নামমাত্র জেলা দিয়ে কিছু হবে না। আমাদের প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য গোর্খাল্যান্ড। তাই মুখ্যমন্ত্রী আসলেও কালিম্পঙে যাচ্ছি না।’’
মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছবেন আগামীকাল, সোমবার। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে গুরুঙ্গদের কালিম্পঙের মহকুমায় কর্মসূচি নেওয়া নিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পঙের উন্নতির দিকে বাড়তি নজর দেওয়ার জেরেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা তড়িঘড়ি নানা প্রকল্প হাতে নিতে বাধ্য হয়েছেন কি না তা নিয়েও খোলাখুলি প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে পাহাড়ের চা-মোমোর স্টল-দোকানে। এটাও শোনা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর লাগাতার পাহাড় সফর ও নানা বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ঘরবাড়ি, নানা প্রকল্প চালু হওয়ার তাঁরা অস্বস্তিতে পড়েই উন্নয়নের জন্য কোমর বাধতে বাধ্য হন জিটিএ চিফ।
এ দিন আপার ফাগুতে এই প্রশ্নের উত্তরে জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘উন্নয়নের জন্য প্রতিযোগিতা হওয়াটা ভাল। তবে লড়াইয়ে কে জিতবে সেটা সময়ই বলবে।’’ এর পরেই গুরুঙ্গ শিলিগুড়িতে আজ, রবিবার যে ডার্বি ম্যাচ হবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মধ্যে সেই প্রসঙ্গ টেনে রসিকতার সুরে বলেন, ‘‘পাহাড়ের ডার্বিতে কে জিতবে সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।’’ মোর্চার অন্দরের খবর, এদিন মোর্চা সভাপতি জলঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতি দেখেন। সেই সময়ে কয়েকটি গাড়ি থেকে দলীয় পতাকা বিলি করা হয়।
এ খবর পৌঁছেছে তৃণমূল শিবিরে। তৃণমূলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মা বলেন, ‘‘পাহাড়ের মানুষের থেকে এখন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন গুরুঙ্গরা। সে জন্য পতাকা বিলি করতে হচ্ছে। সে সব করে লাভ হবে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে পাহাড়ে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। সেটা পাহাড়ের সব সম্প্রদায়ের মানুষ বুঝতে পারছেন। গুরুঙ্গদের পায়ের তলার মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে। সেটা ওঁদের কর্মকাণ্ডেই বোঝা যাচ্ছে।’’
(সহ প্রতিবেদন: সব্যসাচী ঘোষ)