নীরজের জন্য বিমলের বার্তা 

সালটা ২০০৮। সুবাস ঘিসিংকে পাহাড় ছাড়া করা ডাক দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিমল গুরুং। পরবর্তীতে জিএনএলএফের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পতাকা হাতে পাহাড়ের ‘দখল’ নিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী 

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৩৮
Share:

মিছিলে: বিনয়। নিজস্ব চিত্র

সালটা ২০০৮। সুবাস ঘিসিংকে পাহাড় ছাড়া করা ডাক দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিমল গুরুং। পরবর্তীতে জিএনএলএফের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পতাকা হাতে পাহাড়ের ‘দখল’ নিয়েছিলেন তিনি। প্রায় এক যুগ পর সেই জিএনএলএফের নেতার হয়েই ভোট চাইলেন বিমল। শনিবার সকালে একটি অডিয়ো বার্তায় নীরজ জিম্বাকে বিপুল ভোটে জয়ী করার ডাক দেন তিনি। নীরজ জিএনএলএফের মুখপাত্র। বিজেপির প্রতীকে ভোট লড়লেও নীরজের প্রার্থী হওয়া পাহাড়ে বিমলের গুরুত্ব কমার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিমলপন্থী মোর্চার অনেক নেতা। যদিও সেই যুক্তি মানতে নারাজ বিমলপন্থী মোর্চার কার্যকরী সভাপতি লোপসাং লামা। তিনি বলেন, ‘‘জোট রাজনীতির স্বার্থেই আমরা নীরজকে সমর্থন করেছি। এর সঙ্গে আমাদের গুরুত্ব কমার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

Advertisement

লোকসভা ভোটের প্রচারে কালিম্পংয়ে এসে একবারের জন্যও বিমলের নাম সরাসরি নেননি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। শুধু জানিয়েছিলেন, দিল্লিতে ‘ওঁদের’ সঙ্গে দেখা হলে খারাপ লাগে। উল্টো দিকে, ঘিসিংয়ের নাম একাধিকবার নিয়েছিলেন। দার্জিলিঙে ভোট প্রচারে এসে দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় পাহাড়ের মাটিকে ‘ঘিসিংয়ের মাটি’ বলেছেন। উপনির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই চলছিল বিমলপন্থী মোর্চা ও জিএনএলএফের মধ্যে। জিএনএলএফ সূত্রের খবর, দুই দলের সমস্যা মেটাতে বল গড়ায় বিজেপির কোর্টে। বড় শরিকের মধ্যস্থতায় পদ্ম প্রতীকে নীরজকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয় দুই পক্ষই। এর ফলে শরিক হিসেবে মোর্চার চাইতে জিএনএলএফ বেশি গুরুত্ব পেল বলেই মনে করছেন বিমলপন্থীদের একাংশ। যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘জোটে সব শরিকের গুরুত্বই সমান। লক্ষ্য বিনয় তামাং ও তৃণমূল জোটকে হারানো। তাই নীরজকে প্রার্থী করা হয়েছে।’’

বারবার নেতা বদলের সাক্ষী হয়েছে দার্জিলিং। সুবাস ঘিসিং থেকে বিমল গুরুং হয়ে পাহাড়ের ব্যাটন এখন বিনয় তামাংয়ের হাতে। রাজ্যের শাসক দল যেমন বিনয় শিবিরের পাশে দাঁড়িয়েছে, তেমনি বিমল শিবিরের পাশে রয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। রাজনৈতিক স্বার্থে বিমলের পাশে দাঁড়ালেও তাঁকে নিয়ে কার্যত বিব্রত বিজেপি। বিমলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা চলছে। সব সময় দেশপ্রেমের কথা বলা দলের পক্ষে দেশদ্রোহিতায় অভিযুক্ত নেতার পক্ষ নেওয়া যে কঠিন, তা আড়ালে স্বীকার করেছেন বিজেপির অনেক নেতাই। তবে পাহাড়ের একাংশের কাছে বিমল এখনও নেতা। তাই তাঁকে অস্বীকার করতে পারছে না বিজেপি। শুরু থেকেই আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করছে বিমলরা। সরাসরি সেই দাবিকে সমর্থন না করে ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতি নিয়েই চলছেন দিলীপ ঘোষরা। আসন ধরে রেখে পাহাড়ে নেতা বদল করতে পারলে আখেরে লাভ তাদেরই। অনেক বিজেপি নেতা বলছেন, সে ক্ষেত্রে ষষ্ঠ তফসিলের দাবি তোলা জিএনএলএফ তুলনায় ‘সেফ’। মন ঘিসিংদের নামে সে ভাবে কোনও মামলাও নেই। তাই কি ধীরে ধীরে জিএনএলএফকে তুলে ধরতে নীরজকে প্রার্থী করা হল? দিনের শেষে সেই প্রশ্নই ঘুরছে পাহাড় জুড়ে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement