— নিজস্ব চিত্র।
এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা গোটা শহর জুড়ে। কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার ‘ঠক্ ঠক্’ আওয়াজটাও যেন কান ভেদ করে মরমে এসে বিঁধছে। স্থান— জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মর্গ। এখানেই সব হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে বসে মৃতের আত্মীয়স্বজনেরা। জল শহরের আকাশ-বাতাস নীরবে মুছছে চোখের জল।
কেউ ফিরছিলেন বাড়ি, আবার কেউ কর্মক্ষেত্রে যাবেন বলে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেসে চড়ে বসেছিলেন। কিন্তু এই যাত্রাই যে শেষ যাত্রা হবে, তা কে-ই বা ভেবেছিল। এখনও ঠিক ঠাহর হচ্ছে না, কাছের মানুষটি সত্যিই আর নেই! দুর্ঘটনার অভিঘাত এতই প্রবল যে চেহারার বদল ঘটে গিয়েছে। ঠিক করে শেষ দেখাও হয়তো আর হবে না। কাছের মানুষের এমন রূপ কে-ই বা দেখতে চায়।
জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মর্গ জুড়ে সকাল থেকে বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের যাত্রীর আত্মীয়স্বজনদের আনাগোনা। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে যাদের খোঁজ মিলছে না, তখনই বুকটা ধড়াস করে উঠেছে। এ বার কি তাহলে গন্তব্য মর্গ? একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে মর্গে প্রবেশ করে ভাই, বোন, মা-বাবা’র মৃতদেহ শনাক্ত করার অভিজ্ঞতা কি ভাষায় প্রকাশ করা যায়! বুক ঠেলে তখন তো শুধুই আর্তনাদ।
সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, মর্গের সামনে শুধু অপেক্ষা, এই বুঝি ডাক আসে। কাছের মানুষটির নাম শেষ বার বেজে উঠবে যান্ত্রিক উচ্চারণে। কফিন বন্দি করে অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে যার যার গন্তব্যে ফেরা। কেউ আবার মর্গের সামনের চাঁতালেই বাঁধছেন বাঁশের মাচা। এখান থেকেই শেষকৃত্য করে ফিরবেন বাড়িতে। দুর্ঘটনার বিভৎসতা চিরচেনা মা’কেও আর চিনতে দিচ্ছে না সন্তানদের। কেউ বা তাকিয়ে কফিনবন্দি ভাইয়ের দিকে। শেষ পেরেক গাঁথা পর্যন্ত আশা, যদি সাড়া দেয়। এক বার যদি দাদা বলে ডেকে ওঠে!
অপার নিস্তব্ধতার মধ্যেও স্বজন হারানোর হাহাকার যেন চিৎকার করে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। সব শেষ। এ বার প্রাণহীন দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার পালা।