ভোট আসলে তাদের কদর বাড়ে। ভোট আসলে তাদের খোঁজ নেওয়া শুরু হয়। ভোট আসলে রাজধানী ট্রেনে উঠার সুযোগ হয়। রাতারাতি তারা এখন ভিআইপি।
সারা বছর ধরে যাদের কোনও খোঁজ নেই। হঠাৎ আচমকা তাদের ফোন করে আলাপচারিতা বেড়ে যায়। ভোট বড় বালাই। তাই তো রাতারাতি তাঁরা শ্রমিক থেকে ভি আইপি। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের জন্য তাদের গুরুত্ব এখন অনেক। তাঁরা বলতে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকার শ্রমিক। যাঁরা ভিন্ রাজ্যে কাজ করছেন।
তার উপরে পঞ্চায়েত ভোট গ্রামের ভোট। এখানে এক একটা বুথে ভোটদাতার সংখ্যা কম। তাতেই প্রতিটি ঘরে কে কে ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন, তার খোঁজ তো পড়বেই।
তাই সব দলই যে যার নিজেদের ভোটারদের বাড়ি নিয়ে আসার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছে। ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া এবং করনদিঘি এলাকার বহু মানুষ দিল্লি, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন রাজ্য কাজ করেন। এলাকায় কোনও কল কারখানা নেই। নেই শিল্প। ফলে নেই কোনও কর্মসংস্থানও। আর যার ফলে এলাকার অধিকাংশ শ্রমিক ভিন রাজ্য গিয়ে কাজ করেন।
কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ভোটের মুখে তাঁদের আনার জন্য ট্রেনে ভাড়া থেকে শুরু করে সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক দলগুলো।
গোয়ালপোখর এলাকার এক প্রার্থী বলেন, ‘‘গ্রামের ভোট। কিছু করার নেই। একদম ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। দু’একটি ভোটও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যাদের আমরা ফেরত আনার চেষ্টা করছি, আমাদের নিজের লোক। ভোটটা পাব বলে অনেকটা নিশ্চিত। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁদের আসার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করছি।’’ তিনি জানালেন, তাঁর এক ভোটার দিল্লিতে একটি কাপড় কারখানায় কাজ করেন। তাঁর আব্দার রাজধানী এক্সপ্রেসে করে বাড়ি আসবেন, তাই রাজধানীর টিকিটই কাটা হয়েছে তাঁর জন্য।
ইসলামপুরের পাঠাগড়ার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর আজিজুল রহমান দিল্লিতে একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। তাঁর সাথে কথা হচ্ছিল ফোনে। তিনি জানালেন, ‘‘আমাদের গ্রামের যে দু’জন প্রার্থী, দু’জনেই কাছের লোক। কী করব বুঝতে পারছি না।’’ তিনিই জানান, ‘‘দু’জনেই বলছে ট্রেনের টিকিট সহ সব রকম ব্যবস্থা করে দেবেন। কার কাছে ভাড়া নেবো তাই ভাবছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই সব ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা না করে বরং এলাকায় উন্নয়নের কথা ভাবলে আমাদের মতো লোকদের ভিন্ রাজ্য কাজ করতে হত না।’’
তবে জেলার কত শ্রমিক ভিন্ রাজ্য কাজ করেন তার কোনও হিসেব নেই শ্রম দফতরে।
জেলা শ্রম দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাঁরা বাইরে কাজ করতে যান তাঁরা তো আর আমাদের জানিয়ে বাইরে কাজ করতে যান না। ফলে আমাদের কাছে এই বিষয়ে ঠিক তথ্য নেই।’’