প্রতীকী ছবি।
কোথাও রিকশার সামনে মাইক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সামনে হাতের পতাকা। বেজে চলেছে, “ওরে ও হা ম্যালা বাঘ/ তুই হা করিয়া থাক/ ভোট পাবু কাঁচাকলা জঙ্গল বাড়িত ভাগ।” আবার কোথাও ভ্যানরিকশার সামনে বাঘের পতাকা। সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে মাইক্রোফোন। সেখানে বেজে চলেছে, “ওটা কালোবাজারির হাত / ওটা মানুষ মারার হাত।”
ভোট মানেই ছিল গ্রামে গ্রামে লোকসঙ্গীত শিল্পীদের লড়াই। এখন হারিয়ে যেতে বসেছে সেই গান। যে দুই-একজন গান বাঁধছেন তাঁরা শাসকের হয়েই গাইছেন। বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য, “গানের সেই কথা। সেই সুর। সেই তীব্রতা আর নেই। বর্তমান সমাজকে গানের মাধ্যমে তুলে ধরার যে প্রয়াস, তা এখন আর নেই।”
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের হয়ে অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে গান গাইছেন কোচবিহারের বলরামপুরের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ। এ বারেই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে আটটি গান বেঁধেছেন তিনি। কোথাও তিনি বিজেপিকে টার্গেট করেছেন। কোথাও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা প্রকল্পের হয়ে সওয়াল করেছেন। তবে বিরোধী দলের জন্য কোনও গান তৈরি করেননি তিনি। তাঁর কথায়, “তৃণমূলের হয়েই গান করি। যে কোনও ভোটের সময় গান নিয়ে হাজির হই তৃণমূলের মিটিঙয়ে। অন্য দলের হয়ে প্রচার করতে চাই না না বলেই গান গাই না। এ ছাড়া দিদি আমার প্রিয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাওয়াইয়া শিল্পী জানান, তিনি তৃণমূলের দুর্নীতি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সব তুলে ধরে একাধিক গান রচনা করেছেন। কিন্তু তা তিনি সবার সামনে গাইতে চান না। তিনি বলেন, “এই সময় আর বিরাগভাজন হতে চাই না। তবে কেউ চাইলে সেই লেখা গান আমি দিতে পারি।”
কোচবিহার মূলত ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের পীঠস্থান বলেই পরিচিত। এই মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেন ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাসউদ্দিন, নায়েব আলি টেপু। সেই মাটিতে লোকসঙ্গীতের প্রতি মানুষের একটা আলাদা টান থাকবে তা স্বাভাবিক। ভাওইয়ার সঙ্গে এই এলাকায় আরও বেশ কিছু লোকসঙ্গীত জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। ভোটের সময়ে সেই সুরের গানের টানেই মিটিঙয়ে হাজির হতেন বাসিন্দারা। জনসভা আর পথসভা যাই হোক না কেন, তার আগে অন্তত আধ ঘণ্টা ধরে চলত ওই গান।
ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা আশিস বর্মন বলেন, “আমি বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সভায় গিয়েছি শুধু গান শোনার জন্য। সেই টানেই বেশ কিছু ক্ষণ সময় কেটে গিয়েছে। এখন তো শুধু আকচাআকচি।”
ভাওয়াইয়া শিল্পী নজরুল হক বলেন, “এখনও অনেকেই সেই সুরেই গান বাঁধছেন। কোনওটা প্রকাশ হচ্ছে। কোনওটা হচ্ছে না।”
বিরোধীরা অবশ্য দাবি করেছেন, শাসকের ভয়েই এখন আর কেউ সেভাবে গান বাঁধছেন না।
বাম নেতা পরেশ অধিকারী বলেন, “সব জায়গায় একটা ভয় দেখানো চলছে। মানুষের উপরে আক্রমণ চলছে। তাই কেউ গান গাইতে সাহস পাচ্ছেন না।”
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “অনেকেই গান তৈরি করছেন। আমাদের সভায় ওই গান হচ্ছে। আসলে বিরোধীদের কাজ কেউই পছন্দ করছেন না। শিল্পীরাও ক্ষুব্ধ।”