দার্জিলিং পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের।
২০১৭ সালে দার্জিলিং পুরসভার নির্বাচন হয়েছিল। সেই হিসেবে ২০২২ সাল পর্যন্ত পুরসভা চলার কথা। কিন্তু দু’বছরের মাথায় পুরবোর্ড ভেঙে দিয়ে দার্জিলিং পুরসভায় প্রশাসক বসানোর নির্দেশ জারি করল রাজ্য সরকার। দার্জিলিঙের জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়া পি বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দার্জিলিংয়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ময়ূরী বসুকে।
গত ২৯ মে দার্জিলিং পুরসভায় অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন ১৭ জন কাউন্সিলর। পরবর্তীতে তাঁরা দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। ফলে সংখ্যার হিসেবে পুরসভায় পাল্লা ভারী এখন বিজেপির। জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রশাসক বসিয়ে দেওয়ায় আর আস্থা প্রমাণের সভা ডাকার কোনও সুযোগ থাকল না। রাজ্যের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়েছে পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে। সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন বিজেপি ও বিমলপন্থী মোর্চা নেতৃত্ব।
রাজ্যের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন জাপের সভাপতি হরকাবাহাদুর ছেত্রীও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম, পাহাড়ে গণতন্ত্র নেই। সেটা ফের প্রমাণ করল রাজ্য সরকার। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও পুরসভায় প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক।’’ জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, সিপিএম, কংগ্রেস-সহ পাহাড়ের স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলিও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। বিজেপি জোট নেতাদের অভিযোগ, আস্থা ভোট হলে পুরসভা হাতছাড়া হবে বুঝতে পেরেই দার্জিলিঙে প্রশাসক বসান হয়েছে। পাহাড় কমিটির সভাপতি মনোজ দেওয়ান বলেন, ‘‘আমাদের হাতে যাতে ক্ষমতা না যায়, তা আটকাতেই প্রশাসক বসানো হল। আমরা আইনের পথেই জবাব দেব।’’ বিমলপন্থী মোর্চার মুখপাত্র বিপি বজগাই বলেন, ‘‘প্রশাসক বসিয়ে আমাদের আটকানো যাবে না। জোটে আলোচনা করে আইনের পথেই হাঁটব।’’
পাহাড়ের মানুষকে রাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার অনুরোধ করেছেন জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অজয় এডওয়ার্ড। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভায় প্রশাসক বসানো সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। আইনি ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় জুড়ে এর প্রতিবাদ হবে।’’ শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কোনও আইনেই প্রশাসক বসাতে পারে না।’’ যদিও বিনয় শিবিরের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, দলের নেতাদের পুরসভা নিয়ে হঠাৎ করে কোন বিবৃতি দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বিনয়পন্থী মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অনীত থাপাও বলেন, ‘‘প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনই কিছু বলব না।’’ তৃণমূলের পাহাড় কমিটির সভাপতি লাল বাহাদুর রাই বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আইন মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই মনে করছি।’’