Bank Strike

এটিএমে টানা দুর্ভোগ, মনে পড়ল ২০১৬!

এমন দুর্ভোগ অনেকদিন দেখেনি শহর। মাসের শুরুতেই এই ধাক্কার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না লোকজন। এক এটিএম থেকে আর এক এটিএমে ছুটছেন লোকজন। কোথাও টাকা নেই। যদিও বা আছে, সেখানে কয়েকঘণ্টার লাইন। সেখানে দাঁড়িয়ে অনেকেরই মনে পড়ল নোটবন্দির দিনগুলোর কথা। শহর ঘুরে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে শুনল আনন্দবাজার পত্রিকা। সুনীতি রোডে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন রতন দে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৫৩
Share:

চালচিত্র: শহরে অনেক এটিএমের ঝাঁপই বন্ধ ছিল। (ডানদিকে) কোথাও খোলা থাকলেও ছিল দীর্ঘ লাইন। রবিবার কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র

কোথাও এটিএমের শাটার নামানো। কোথাও তা খোলা থাকলেও মেশিন ‘আউট অব ক্যাশ’ দেখাচ্ছে। কোথাও দু’একটি এটিএমে টাকা আছে খবর পেলেই লোকজন ছুটে যাচ্ছেন। তবে সেখানে বিশাল লম্বা লাইন। অগত্যা অন্য কাজকর্ম ভুলে লাইনেই দাঁড়াতে হচ্ছে। অনেকে ভয় পাচ্ছেন, সোমবারেও যদি ধর্মঘট চলে, তাহলে কী হবে। শহর জুড়ে এই পরিস্থিতি দেখে অনেকেরই মনে পড়ছে নোটবন্দির দিনগুলোর কথা। সেইসময় একইরকম আতঙ্কের

Advertisement

আবহ তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে।

পর পর দু’দিন ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের পর রবিবারেও সব বন্ধ। তাই সকাল থেকেই সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। অনেকেই টাকার খোঁজে হন্যে হয়ে এক এটিএম থেকে আরেক এটিএমে কার্যত ছুটে বেড়াচ্ছেন। মাসের দু’তারিখ। অথচ এ দিনও অনেকে বেতন তুলতে পারেননি। বাজার-হাট, সংসারের খরচ, ছেলেমেয়ের স্কুল ও টিউশনির টাকা— ছা-পোষা মানুষের ঘরে এসব মেটানোর কোনও টাকাই নেই। অনেকেরই পরিষ্কার বক্তব্য, ব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনগলির এ ভাবে সাধারণ মানুষকে সমস্যার দিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক নয়। এ ব্যাপারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানালেন, সোমবার থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

Advertisement

কোচবিহারের শহরতলির বহু এটিএম নিয়ে এমনিতেই অভিযোগ, সেগুলি বেশিরভাগ সময়েই খারাপ থাকে। শহরের এটিএমেও অনেক সময় পরিষেবা মেলে না। তাই হাতে গোনা কিছু এটিএমের উপরেই নির্ভর করে চলতে হয় শহরবাসীকে। এখন সেগুলির বেশিরভাগই বন্ধ। সাগরদিঘি পাড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি এটিএম চালু ছিল। সেখানে সকাল থেকেই ভিড়। লাইনে দাঁড়ানো গ্রাহকদের কয়েকজন জানালেন, একাধিক এটিএমে ঘুরেছেন তাঁরা। কোথাও কোনও টাকা পাননি। বেশিরভাগই বন্ধ। দু’একটি খোলা থাকলেও সেখানে টাকা নেই।

সুনীতি রোডে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন রতন দে। সরকারি চাকরি করেন। বললেন, ‘‘দাদা, এ তো দেখছি সেই ২০১৬ সালে নোটবন্দির মতো অবস্থা! তখনও এইরকম অস্থির পরিস্থিতি হয়েছিল। সোমবারেও যদি সব বন্ধ থাকে, তাহলে সংসার চালাব কী করে?’’ তাঁর কথায়, “এটিএম থেকে টাকা তুলেই সংসারের খরচ করি। মাস শেষ। ঘরের রোজকার ব্যবহারের জিনিসপত্রও শেষ। বেতন তো ঢুকেছে। কিন্তু তুলতেই তো পারছি না। খুবই সমস্যায় পড়েছি। এখন কার খাছে ধার করতে যাব বলুন তো!”

কোচবিহারের ফার্মার্স ক্লাব সাতমাইল সতীশের সম্পাদক অমল রায় জানান, তাঁদের একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে। সেখানে প্রতিদিন কিছু শ্রমিক কাজ করেন। দিনশেষে তাঁদের মজুরি দিতে হয়। কিন্তু টানা তিনদিন ব্যাঙ্ক ও এটিএম বন্ধ থাকায় লেনদেন নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, “প্রকল্পের কাজে অসুবিধের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। টাকা হাতে না থাকায় কাউকে পেমেন্ট দেওয়া যাচ্ছে না।”

নিউ কোচবিহার স্টেশন যাওয়ার রাস্তায় ছোট্ট হোটেল চালান দীপ্তেশ সেন। তিনি বলেন, “প্রতিদিনই কেনাকাটা করতে হয়। এটিএম থেকে টাকা তুলেই তা করি। ব্যাঙ্ক ও এটিএম দুটোই তিনদিন বন্ধ থাকায় অসুবিধেয় পড়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement