ববিতা সরকার। নিজস্ব ছবি।
তাঁর করা মামলার কারণে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি খুইয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নিজে সেই চাকরি পেয়েওছেন। কিন্তু কর্মস্থলের কাছে বাড়ি ভাড়া পাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ববিতা সরকার। শিক্ষিকার অভিযোগ, মাত্র ৭ দিনের নোটিসে ভাড়া বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁকে বাড়ি ভাড়া যাতে না দেওয়া হয়, তার জন্য বাড়ির মালিকদের ‘চাপ’ও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেন ববিতা।
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা গার্লস হাই স্কুলেই শিক্ষিকার চাকরি পেয়েছেন ববিতা। ঘটনাচক্রে, প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ এই মেখলিগঞ্জেরই বিধায়ক এবং ইন্দিরা গার্লস্ হাই স্কুলেই পড়াতেন অঙ্কিতা। শীতে প্রতি দিন শিলিগুড়ি থেকে এসে স্কুল করা সম্ভব নয়, এই ভেবেই মেখলিগঞ্জে স্কুলের পাশে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন ববিতা। তাঁর দাবি, মাত্র ৭ দিনের নোটিসে সেই বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয় তাঁকে। ববিতার কথায়, ‘‘আমায় বলা হয়েছিল, পুরসভার নিয়ম মেনে বাড়ি তৈরি হয়নি। সমস্যা রয়েছে বলেই বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছিলেন না মালিক। আরও অনেকের কাছেই বাড়ি ভাড়ার জন্য গিয়েছিলাম। প্রথমে রাজিও হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরে তাঁরা জানিয়ে দেন, বাড়ি ভা়ড়া দিতে পারবেন না। পরে শুনলাম, ওঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ কিন্তু কে বা কারা ‘চাপ’ দিয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি ববিতা। তিনি শুধু বলেন, ‘‘পিছনে কে বা কারা আছেন, তা কেউই পরিষ্কার করে বলেননি। আমায় শুধু বলা হয়েছে, ওঁদের (বাড়িমালিক) উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে যাতে আমাকে ভাড়া দেওয়া না হয়।’’
তবে এখন অবশ্য একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছেন ববিতা। তিনি জানান, কলেজের এক পরিচিত সাহায্য করায় বাড়িটি পাওয়া গিয়েছে। ববিতা বলেন, ‘‘বাড়ি ভাড়ার জন্য অনেককেই বলে রেখেছিলাম। আমার এক পরিচিত দাদাই এই বাড়ির সন্ধান দিয়েছেন। আপাতত এখানেই থাকব।’’ ভবিষ্যতেও মেখলিগঞ্জে তাঁকে এই ধরনের সমস্যার পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘‘বুঝতে পারছি না কী করব! স্বামী ব্যবসায়ী। সব সময় তো আর আমার সঙ্গে থাকবেন না। তখন কী করব? তাই, আইনজীবীকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছি। উনি আদালতে গোটা বিষয়টা জানাবেন।’’
ববিতা নিজে সরাসরি কারও দিকে আঙুল না তুললেও এই ঘটনায় শাসকদলকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দধিরাম রায় বলেন, ‘‘ববিতা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে একটি প্রতিবাদী মুখ। শাসকদল ওঁকে হেনস্থা করার জন্য এই সব করছে। মেখলিগঞ্জে সহজেই বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু তৃণমূলের রোষের মুখে পড়ার ভয়ে কেউ ববিতাকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছে না।’’
পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিধায়ক পরেশও। তিনি বলেন, ‘‘ববিতা যে অভিযোগ করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাড়ি ভাড়া পেতে হলে বাড়ি খুঁজতে হবে। বাড়ির মালিক কী শর্তে বাড়ি ভাড়া দেবেন, সে ব্যাপারে মালিকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শুধু মাত্র অভিযোগ করলেই বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় না। উনি বাড়ি ভাড়া খুঁজলে নিশ্চয়ই বাড়ি ভাড়া পাবেন।’’