বিশ্ববিদ্যালয় পুরনো প্রশ্নপত্র পাঠানোয় বাতিল হয়ে গেল বিএ সমতুল কামিল পার্ট টু-এর ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষাহলে পুরনো প্রশ্নপত্র দেখে বুধবার দুপুরে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের রতুয়ার ঐতিহ্যবাহী বাটনা জেএমও সিনিয়র মাদ্রাসায়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালের অধীন এদিন ওই মাদ্রাসায় ছিল ইতিহাস পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা হাতে প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর তারা দেখেন যে তাদের ২০১৫ সালের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছে। এরপরেই ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্টকে ঘেরাও করে শুরু হয় পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। মাদ্রাসার তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের ভুলেই এমন ঘটেছে বলে স্বীকার করে নিয়ে পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হলেও যাদের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের শাস্তির দাবিও উঠেছে।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক তানভির আহমেদ অবশ্য ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কোথাও একটা ভুল হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফের নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু এতবড় ভুল কীভাবে কাদের গাফিলতিতে হল তা নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
প্রথম শ্রেণি থেকে আরবি শিক্ষার এমএ সমতুল শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে, রাজ্যে এমন মোট চারটি মাদ্রাসা রয়েছে। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের একমাত্র মাদ্রাসাটি রয়েছে রতুয়ার বাটনায়। প্রতিষ্ঠানের নাম বাটনা জামিয়া মাজহারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা। বাটনা জেএমও সিনিয়র মাদ্রাসা হিসেবেই জেলায় পরিচিত মাদ্রাসাটি! ওই মাদ্রাসায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই ক্যাম্পাসে বিএ সমতুল কামিল ও এমএ সমতুল টাইটেল পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পাঁচহাজার। জেলার বাইরে থেকেও পড়ুয়ারা সেখানে পড়তে আসে। মাদ্রাসায় বিএ সমতুল কামিল পার্ট টু-এর ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বুধবার ইতিহাস পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল ৬০০ পরীক্ষার্থীর।
ইতিহাস পরীক্ষা বাতিল হলেও এদিন রাজ্যের বাকি তিনটি মাদ্রাসায় ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
মাসতিনেক আগেই শৌচাগার, পঠন-পাঠন নিয়ে অভিযোগ জানাতে যাওয়ায় বহিরাগতদের ডেকে পড়ুয়াদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ওই মাদ্রাসা। তখনকার ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট আনোয়ারুল হকের অপসারণের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়! যার জেরে কতৃপক্ষ আনোয়ারুল হককে সরিয়ে আফতাবউদ্দিন আলি আহমেদকে ওই পদে বসানো হয়। তারপর কিছুদিন না গড়াতেই এবার বিশ্ববিদ্যালের গাফিলতিতে ঐতিহ্যবাহী ওই মাদ্রাসা কালিমালিপ্ত হওয়ায় পড়ুয়াদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ জেলার শিক্ষামহল!
কয়েকজন পরীক্ষার্থী এদিন বলেন, পরীক্ষা বাতিল হলেও এতে পরীক্ষার্থীদের উপরে মানসিক চাপ পড়বে। মাদ্রাসা ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য রাজ্য সভাপতি মহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, কখনও কতৃপক্ষ, কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফিলতিতে মাদ্রাসার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এদিন যাদের গাফিলতিতে এমন ঘটনা ঘটেছে, তাদের দায়িত্ব থেকে সরানোর পাশাপাশি শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।