(বাঁ দিকে) আওয়ামী নেতা মহম্মদ রুবেল ইসলাম। বিএনপির ইশাক জমান পাটোয়ারী (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়েছে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া এবং বাংলাদেশ থেকে পলায়নের। তার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর এবং আক্রমণের ঘটনা অব্যাহত। এই অবস্থায় প্রাণে বাঁচতে ভারতে চলে এসেছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। তাঁর দাবি, বাংলাদেশে থাকা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্য দিকে, খুশির মেজাজে ভারত থেকে বাংলাদেশ ফিরতে দেখা গেল পঞ্চগড়ের এক বাসিন্দাকে। হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় খুশি ওই বিএনপি সমর্থক। বস্তুত, একই সময়ে বাংলাদেশের দু’রকম ছবি উঠে এল শিলিগুড়িতে।
বাংলাদেশের দিনাজপুর পুরসভার বাসিন্দা মহম্মদ রুবেল ইসলাম সাত বছর ধরে হাসিনার দলের সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলবার তিনি শিলিগুড়িতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাংলাদেশে থাকা দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছে। যেখানেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের পাচ্ছে, সেখানেই মারধর করা হচ্ছে। বাড়ি লুট করা হচ্ছে। আমি নিজের পরিবার ছেড়ে ভারতে এসে প্রাণ বাঁচালাম।’’ তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ছাত্র-যুবরা, সেটা এখন শুধু ক্ষমতা দখলের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। রুবেল বলেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হয়েছে। দেশের একের পর এক শপিং মল, সরকারি কার্যালয়ে হামলা চালাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘যাঁরা এ সব করছেন, তাঁরা দেশের ভাল চান না।’’
মঙ্গলবার সকালে তিনি যখন ভারতে আসছিলেন, তখনকার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আওয়ামীর ওই নেতা বলেন, ‘‘ভয়াবহ! আসার সময় রাস্তায় দেখলাম কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। দোকানপাট খোলা থাকলেও লোক নেই। বেশির ভাগ দোকানেই লুট হয়েছে। কোনও মালপত্র নেই।’’ রুবেলের স্ত্রী এবং তিন সন্তান বাড়িতে। পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ওই নেতা বলেন, ‘‘অনুমতি পেলে তাদেরও সাথে নিয়ে আসতাম। চিন্তায় আছি। প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়ার পর নাকি তারা স্বাধীনতা পেয়েছে! আসলে যারা লুটপাট চালাচ্ছে, তাদের স্বাধীনতা হয়েছে। যারা দেশ চালাবে বলে ভাবছে, তারা দেশপ্রেমী না। সংসদ ভবন, গণভবন লুট করছে। তারা কী ভাবে দেশ চালাবে?’’ পাশাপাশি, হাসিনার দেশ ছাড়ার বিষয়ে রুবেলের সংযোজন, ‘‘তিনি ফেরত না আসলে আমরা অবশ্যই নেতৃত্ব হারাব। তিনি দেশ ছাড়াতে আমরা হতাশ।’’
সোমবার থেকেই ফুলবাড়ির ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে দেশ পারাপারের ভিড় অনেকটাই থমকে গিয়েছে। গত দু’দিন আগেও দুই দেশের যে সংখ্যক মানুষের যাতায়াত ছিল, তা আর চোখে পড়ছে না। অনেকেই ভারতে এসেছিলেন চিকিৎসা, পড়াশোনার কারণে। তাঁদের অনেকে এখন দেশে ফেরা নিয়ে চিন্তিত। তবে খুশির মেজাজে মঙ্গলবার ভারত থেকে বাংলাদেশ ফিরতে দেখা গেল পঞ্চগড়ের এক বাসিন্দাকে। ইশাক জমান পাটোয়ারী নামে ওই যুবক পড়াশোনার জন্য সিকিমে ছিলেন। তবে দেশের উত্তাল পরিস্থিতির সময় তিনি বাড়ি ফিরছেন। ইশাকের দাবি, তিনি বিএনপির সমর্থক। তাই আগে দেশে ফিরতে চেয়েও পারেননি। এ বার ভাল মেজাজে বাড়ি ফিরছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আওয়ামী লীগের তাণ্ডবে আমার বাবাকে টানা ১৭ দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। মা একা থেকেছেন। আমার বাড়ি যাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। আমরা বিরোধী দল করি বলেই এত অত্যাচার। হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। হ্যাঁ, আজ আমি খুশির মেজাজে দেশে ফিরছি। দেশের পরিস্থিতি এখন ঠিক আছে।’’ উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই বিএনপি চেয়ারপার্সন তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তিনি কারাবন্দি হন। খালেদার সঙ্গে একের পর এক জেলবন্দি বিএনপি নেতাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।
অন্য দিকে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনর্দিষ্ট কালের জন্যে বন্ধ করা হল শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীচিত্র দেখানোর পরিকল্পনা। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ভবনে আগামী ২২ শ্রাবণ যে বৃক্ষরোপণের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, সেটিও মুলতুবি করা হয়েছে।