হামলার পরে কমল অগ্রবাল। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ।
দিনে দুপুরে হাঁসুয়া নিয়ে চেম্বারে ঢুকে পড়ে শিলিগুড়ির এক সিপিএম প্রার্থীকে আক্রমণ করল এক যুবক। কমল অগ্রবাল নামে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ওই বিদায়ী কাউন্সিলর তথা এ বারের প্রার্থীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে অর্জুন দাস নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কমলবাবুকে ওই যুবক চিনত না। তাই সরাসরি তাঁকেই আঘাত করেনি। তবে তাঁর নাম ধরে চিৎকার করতে করতে এলোপাথাড়ি হাঁসুয়া চালাচ্ছিল। তাতে কমলবাবু সামান্য জখম হয়েছেন। তাঁর দুই কর্মীও আহত হয়েছেন। তাঁদের চিৎকারেই আশপাশের বাসিন্দা ও পথচারীরা আইনজীবী কমলবাবুর চেম্বারে ঢুকে অর্জুনকে ধরে ফেলেন।
সিপিএমের অভিযোগ, পুরভোটের আগে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে পরিকল্পনা করেই তাদের প্রার্থীর উপর হামলা চালানো হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ওই যুবককে মদ খাইয়ে ভুল বুঝিয়ে কমলবাবুর উপর হামলা করতে পাঠানো হয়েছিল। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা জানান, ধৃত যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকায় অসংলগ্ন কথা বলে চলেছে। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, কমলবাবুর উপরেই হামলা করতে সে হাঁসুয়া নিয়ে গিয়েছিল। তবে তার কী উদ্দেশ্য ছিল বা ঘটনার পিছনে কোনও ইন্ধন বা উস্কানি ছিল কি না, তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ সবই খতিয়ে দেখছে।
এ দিন সকালে প্রচার সেরে ১১টার পরে কমলবাবু চেম্বারে ঢোকেন। দু’জন কর্মী ছাড়াও কমলবাবুর স্ত্রী মঞ্জুদেবী ছিলেন। আচমকা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে হাঁসুয়া তুলে ওই যুবক হুমকির সুরে বলেন, ‘‘কমল অগ্রবালের সঙ্গে দেখা করব। ওকে ডাক।’’ যুবকের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন কমলবাবু। তবে সে তাঁকে চিনতে পারেনি। উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে কমলবাবু বলেন, ‘‘আপনি বসুন, আমি ডেকে আনছি।’’ তবে ওই যুবক তখনও হাঁসুয়া উঁচু করেই ধরেছিল। তাই চেম্বারের এক কর্মী তাকে সরে দাঁড়াতে বললেই ওই যুবক এলোপাথাড়ি হাঁসুয়া চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। সকলে তৎক্ষণাৎ দূরে সরে যায়। তবে তারপরেও কমলবাবু ও তাঁর দুই কর্মী আহত হয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সকাল ১১টা নাগাদ চার্চ রোডের পিচের রাস্তায় ধৃত যুবককে হাঁসুয়া ধার করতে দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকে সরাসরি কমলবাবুর অফিসের দিকে এগিয়ে যায় ওই যুবক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ধৃত যুবক বছর দশেক আগে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে থাকত। তার বাবা জুতো সারাই করেন, মা পরিচারিকার কাজ করেন। বর্তমানে তাঁরা হায়দারপাড়ায় থাকেন। সে কারণে এই ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা থেকে ওই যুবকের নাম বাদ যায়। অভিযোগ, এই যুবককে কেউ বোঝায় যে, তার জন্ম যে ওয়ার্ডে সেখানেই তার নাম থাকা উচিত কিন্তু কমলবাবুই প্রভাব খাটিয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিয়েছে। কমলবাবুর বাড়িতে গিয়ে হামলা করলে তার নাম ভোটার তালিকায় উঠতে পারে বলেও ওই যুবককে বোঝানো হয় বলে অভিযোগ। তার জেরেই এ দিন অর্জুন হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, একটি সর্বভারতীয় ডানপন্থী দলের নেতার কাছ থেকে ওই যুবক এ দিন সকালে নেশা করার টাকা পেয়েছিল। বাসিন্দাদের হাত থেকে যুবককে উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই যুবক বলেন, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হল। যে টাকা দেয় আমি তার হয়েই কাজ করি। পুলিশ আমাকে ইচ্ছে করে ধরেছে।’’ কমলবাবুর উপর হামলা চালানোর জন্য কে টাকা দিয়েছিল জানতে চাইলে ওই যুবক তা বলতে চায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের পকেটে ভোটার কার্ড হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগের একটি প্রতিলিপি পাওয়া গিয়েছে। একটি এটিএম কার্ডও ছিল।
ঘটনার কথা চাউর হতেই ভিড় জমে কমলবাবুর চেম্বারের সামনে। পুলিশের গাড়ি ঘিরেও বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় বাসিন্দা জেলা তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না অগ্রবাল, ১০ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী রুচি অগ্রবাল-সহ বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরাও চলে আসেন। গিয়েছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার এবং মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যও। বিকেলে এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলও করেন অশোকবাবুরা। অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুরভোট ঘোষণার আগে থেকেই আমাদের প্রার্থীদের নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছে। এ দিন প্রার্থীকে খুনের চেষ্টা হয়েছে।’’ পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ না করলে শহর অচল করে আন্দোলন হবে বলে হুমকি দেন তিনি।
তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, ‘‘ভোটে রাজনৈতিক লড়াই থাকবে, তাই বলে এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।’’ ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সঞ্জীব অগ্রবাল জানান, কমলবাবু তাঁর সম্পর্কিত দাদা। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পরেই ওঁর অফিসে চলে যাই। এই ঘটনায় নানা রকম অভিযোগই শোনা যাচ্ছে। পুলিশের উচিত ঠিক কী ঘটেছে তা তদন্ত করে বার করা।’’