চর: আলিপুরদুয়ারে কালজানি নদী। বিমান থেকে তোলা। ছবি: নারায়ণ দে
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া এলাকা থেকে ১৪০০ মিটার দূরে ওপার বাংলাদেশের মোহনপুরে আত্রেয়ীর উপর আড়াআড়ি সেচবাঁধ ও লকগেট তৈরির ফলে গত দু’বছর ধরে এ পারে জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। গরম পড়তেই এপারে আত্রেয়ীর ধু ধু বালির চর জেগে উঠেছে। কোথাও সামান্য এলাকা নিয়ে ডোবার মতো হাঁটু জল নিয়ে আত্রেয়ী কার্যত মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।
আত্রেয়ীর উৎপত্তিস্থল থেকে প্রয়োজন মতো জল নদীতে আসছে না। লকগেট বসিয়ে বাংলাদেশের তরফে ইচ্ছে মতো জল আটকানো অভিযোগ তুলে বালুরঘাটে নদী বাঁচাতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, রবিবার তার দু’বছর পূর্তিকে স্মরণ করে পরিবেশ সংগঠন দিশারি। তাদের উদ্যোগে একদল পড়ুয়া আত্রেয়ী রক্ষায় শপথ নিয়ে গান আবৃত্তি নদীর পাড় সাফাইয়ের মতো এদিন নানা কর্মসূচি পালন করে প্রতিবাদ জানায়।
আত্রেয়ীই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দীর্ঘতম নদী। উত্তরে কুমারগঞ্জ সীমান্ত থেকে দক্ষিণে বালুরঘাটের ডাঙ্গি সীমান্ত পর্যন্ত এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৮ কিলোমিটার। আত্রেয়ী বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর দিক থেকে এই জেলার কুমারগঞ্জের সমজিয়া দিয়ে জেলা শহর বালুরঘাটের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফের বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার ‘চলনবিল’ হয়ে করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মা নদীতে মিশেছে।
একদা তিস্তা নদী দার্জিলিং পাহাড় থেকে নেমে আসার পর জলপাইগুড়ি জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় দক্ষিণ দিক থেকে তিস্তার তিনটি শাখা নদী বের হয়ে আসে। এর মধ্য-ভাগের শাখাটি হল আত্রেয়ী নদীর উৎস। পরবর্তীতে এক বিধ্বংসী বন্যায় বিরাট ধসে তিস্তার গতিপথ বদলে যায়। তিস্তার সঙ্গে আত্রেয়ীর বিচ্ছেদ ঘটে। ফলে আত্রেয়ী নদী তার প্রধান জলধারা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতীম কর্মকারের কথায়, দু’দেশের জরুরি পদক্ষেপ এবং মানুষের সচেতনতাই উত্তরবঙ্গে আত্রেয়ীর মত সমস্ত নদীর হারিয়ে যাওয়া জলধারা ফেরাতে পারে। তার জন্য চাই পৃথক নদী দফতর।