হতশ্রী: এমনই অবস্থা রাজেন্দ্র প্রসাদ গার্লসের শৌচাগারের। নিজস্ব চিত্র
কোথাও শৌচাগারের ভিতরে ঝুল জমে রয়েছে। কোথাও আবার সেখানকার দেওয়ালে ছোপ ছোপ নোংরার দাগ। শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হলে ঘেন্নায় সিঁটিয়ে যান অধিকাংশ ছাত্রীই। শিলিগুড়ির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাজেন্দ্র প্রসাদ গার্লস হাইস্কুলের পরিস্থিতি এমনই। শৌচাগারের সাফাই নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। শুধু ছাত্রীরাই নয় এই সমস্যায় জেরবার শিক্ষিকারাও। স্কুলে ৪০ জন শিক্ষিকার জন্য রয়েছে মাত্র দু’টি শৌচাগার। অভিযোগ সেগুলোর অবস্থাও তথৈবচ।
স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকা আসেন জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি থেকে। কয়েকজন আসেন ইসলামপুর থেকেও। সারাদিনে অথবা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুলে আসার পরে শৌচাগারের যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় শৌচাগারে যাওয়াটা তাঁদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন অপরিষ্কার শৌচাগার ব্যবহার করলে তা শিক্ষিকা এবং ছাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। শৌচাগার পরিচ্ছন্ন না-থাকলে রোগ সংক্রমণও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘অপরিষ্কার শৌচাগারের কারণে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে। তাতে জ্বালা-যন্ত্রণা হতে পারে, কাঁপুনি দিয়ে জ্বরও আসতে পারে।’’ অনেকসময় নোংরা শৌচাগারে যাওয়ার ভয়ে অনেকে প্রস্রাব চেপে রাখেন। বিপদ হতে পারে তাতেও। ‘পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজ়িজ’ হতে পারে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৩ হাজার ছাত্রী রয়েছে। তিনতলা স্কুল ভবনের এক তলায় আটটি শৌচাগার রয়েছে পড়ুয়াদের জন্য। তার চারটি প্রতিবন্ধী ছাত্রীদের। তবে সবগুলোই নষ্ট হয়ে পড়ে সাত মাসেরও বেশি। এক তলার ছাত্রীদের তাই দোতলা বা তিনতলার শৌচাগারে যেতে হয়। দোতলার শৌচাগার নোংরা হয়ে পড়ে রয়েছে। ছাত্রীদের অভিযোগ, দুর্গন্ধের জন্য অনেক সময় নাক চাপা দিয়ে যেতে হয়। উঁচু ক্লাসের বেশ কিছু ছাত্রী জানান, শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন থাকায় বাধ্য হয়ে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করেন তাঁরা।
তিন তলায় রয়েছে ছ’টি শৌচাগার। তার একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে বছর দেড়েক আগে সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর পাশেও এখন আবর্জনা জমে রয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা দেব অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন।
প্রবীণ শিক্ষিকা প্রভাবতী গুপ্ত বলেন, ‘‘দু’জন সাফাই কর্মী রয়েছেন। যে টাকা পান তাতে তাঁরা অনেক সময় বেশি কাজ করতে চান না। তাতে সমস্যা হচ্ছে।’’
স্কুল পরিদর্শক তপন কুমার বসু জানান, গত দু’বছরে বারবার স্কুলগুলোকে জানানো হয়েছে কারও কোনও সমস্যা থাকলে সেগুলো জানাতে। সেই মতো সরকারের তরফে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে ওই স্কুল এখনও কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, ‘‘শৌচাগার পরিষ্কার রাখার বিষয়টি স্কুলকেই দেখতে হবে।’’