সরব: নাগরিক অধিকারের দাবিতে স্লোগান উঠল অবস্থানে। বুধবার চাকুলিয়ার কানকিতে। নিজস্ব চিত্র
প্রতিবাদের ভাষা হল কবিতা আর দেশভক্তির শের-শায়েরি। নতুন নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে তৈরি মঞ্চে। বুধবার চাকুলিয়ার কানকি বাসস্ট্যান্ডে ‘দেশ বাঁচাও সংবিধান রক্ষা কমিটি’র মঞ্চে ধর্নার তৃতীয় দিনে দেখা গেল এমনই ছবি। সোমবার থেকে নয়াদিল্লির শাহিনবাগের ধাঁচে চাকুলিয়ার ওই প্রত্যন্ত প্রান্তের প্রতিবাদ-মঞ্চে শামিল হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বেশিরভাগই মহিলা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতো এ দিনও কর্মসূচির শুরুতেই হয় জাতীয় সঙ্গীত। পাঠ করা হয় সংবিধানের প্রস্তাবনা। প্রতিবাদ মঞ্চ ভরে শের-শায়েরি, গান, কবিতায়। সবই দেশভক্তির। শের-শায়েরি শোনান চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজও (ভিক্টর)।
তাঁর কথায়, ‘‘উঠতি হ্যায় হর সদা ইয়েহি শাহিনবাগ সে, জ্বলনে না দেনগে মুলক্কো খুদকে চিরাগ সে। ক্যায়সে কিসি কো মুলক্সে বাহর করেগা, ইয়ে ব্যহম ওহ নিকাল দে অপনে দিমাগ সে।।’’ (শাহিনবাগ থেকে আওয়াজ উঠছে প্রতি মুহূর্তে, নিজেদের প্রদীপের আগুনে দেশ জ্বলতে দেব না। কী ভাবে কাউকে দেশের বাইরে বের করবে, ওঁরা যেন এই ভুল ধারণা না রাখেন।)
নতুন নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে কী হয়, এ দিন সে দিকে নজর ছিল সকলের। দুপুরেই মঞ্চে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির খবর পৌঁছল। তার ব্যাখ্যা ধর্না মঞ্চে সকলকে শোনান ভিক্টর। একইসঙ্গে তাঁর বার্তা, ‘‘থেমে থাকব না। লড়াই জারি থাকবে। এই লড়াই দেশ রক্ষার লড়াই।’’ এ দিন ধর্না মঞ্চে এসে বাড়তি মনোবল জোগায় স্থানীয় একটি স্কুলের পড়ুয়ারা। তারাও প্রতিবাদী সুরে ‘হল্লা বোল, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে সরব হয়। আয়োজকেরা জানান, পড়ুয়ারাও শামিল হওয়ায় এই আন্দোলন আরও শক্তি পেল। ধর্নামঞ্চে এক স্কুলপড়ুয়া জানায়, ‘‘দেশরক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। দেশ আজ সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। কী ভাবে চুপ করে থাকা যায়!’’
এ দিন মঞ্চে আসেন টিটিয়া গ্রামের এক গৃহবধূ। তিনি জানান, তাঁর বাড়িঘর সব গিলেছে মহানন্দা নদী। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় হারিয়েছে পরিচয়ের সব নথিও। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে নথি দেখাব? তা না পারলে কি দেশ ছাড়া হতে হবে? এক বার নদী ভিটেমাটি গিলেছে। অনেক কষ্টে ফিরেছি রোজনামচায়। নতুন আইনের কথা শুনে ফের সব হারানোর আতঙ্ক ঘিরেছে।’’ তিনি জানান, অধিকারের লড়াইয়ে শামিল হতেই ১০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে ধর্নামঞ্চে এসেছেন। তাঁর মতোই ধর্নামঞ্চে থাকা এক মহিলা বলেন, ‘‘এই মাটিতে জন্ম। এই মাটিতেই ছিলেন আমাদের সাত পুরুষ। এই মাটিই আমার সম্পদ। তা রক্ষা করতে পথে তো নামতেই হবে।’’
এক বছরের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে মঞ্চে আসেন রুবিয়া খাতুন। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘কোলের এই শিশুকেও প্রমাণ করতে হবে সে এই মাটিতেই জন্মছে কিনা! এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে।’’