বৈঠকে অন্যদের সঙ্গে অমর সিংহ রাই ও অনীত থাপা। শুক্রবার দার্জিলিঙে। নিজস্ব চিত্র।
গত চার বছর ধরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ছিল দু’ভাগে বিভক্ত, বিমল গুরুংপন্থী ও বিনয় তামাংপন্থী। এ বারে পাকাপাকি ভাবে মোর্চা থেকে আলাদা হয়ে নতুন দল গড়তে চলেছেন অনীত থাপা। এই ইঙ্গিত দিয়ে অনীত এ দিন জানান, আর বিমল আর বিনয়ের সঙ্গে দল ও পতাকার ভাগ নিয়ে আইনি লড়াই নয়, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন দল তৈরির ঘোষণা করে দিলেন অনীত থাপা।
শুক্রবার দুপুরে দার্জিলিং এইচডি লামা রোডের একটি হোটেলে অনীতের নেতৃত্বে মোর্চার দ্বিতীয় গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। ২০১৭ সালে বিনয় তামাং ছাড়া গুরুংয়ের দল থেকে যাঁরা সরে এসেছিলেন, সকলেই এই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকের পর অমর সিংহ রাই ও সতীশ পোখরেলদের মতো নেতাদের পাশে বসিয়ে অনীত নতুন দলের কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রস্তাবিত তিনটি নতুন নাম এবং পতাকার নকশা নিয়ে আলোচনা করছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে।
অনীত বলেন, ‘‘আমরা পাহাড়ের মাথা উঁচু করে থাকা, পাহাড়ে উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখার রাজনীতি করে যাব। নতুন ভাবে আমরা দল, সংগঠন নিয়ে আসছি। কারও সঙ্গে পতাকা বা দল নিয়ে টানাটানি আর করব না। আইনি জটিলতার মধ্যেও আমরা আর যেতে চাই না।’’
২০১৭ সালে দলে বিভাজনের পর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মোর্চার দু’টি দল তৈরি হয়, গুরুংপন্থী এবং বিনয়পন্থী মোর্চা। জুলাই মাসে বিনয় দল ছেড়ে পতাকা বিমলকে ফেরত দেন। সম্প্রতি তিনি গুরুংয়ের সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। এখনও তিনি গুরুংয়ে সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই চলছেন। সেখানে দার্জিলিং সদরে বসে অনীত তাঁদের গোষ্ঠীকে আরও সংগঠিত করার কাজে নেমেছেন। ইতিমধ্যে দার্জিলিঙে তিলকচন্দ্র রোকা এবং কালিম্পংয়ে গোপাল রুচলের মতো গুরুংঘনিষ্ঠরা অনীত শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তাতে আগামী দিনে বিমল গুরুং-কে যে অনীত জোরদার লড়াই দিতে তৈরি হচ্ছেন, সে কথাও মনে করছেন পাহাড়ের অনেকেই। তবে গুরুং-র মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেছেন, ‘‘অনীতকে আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাহাড়ে একটাই মোর্চা রইল। আর অনীতের জন্য আমাদের দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’
পাহাড়ের নেতারা অবশ্য মনে করেছেন, বিমল-বিনয় এক দিকে চলে আসায় দুই মোর্চার যে টক্কর চার বছর ধরে চলছিল, তা আপাতত শেষ। তা হলে মোর্চা গোষ্ঠীর দ্বিতীয় পক্ষ কি শেষ পর্যন্ত বিমলের হাত ধরবে? অর্থাৎ নতুন করে বিমল পুরনো শক্তি ফিরে পাবেন? এখানেই নাটকীয় ভাবে অনীত নতুন দল গঠনের কথা ঘোষণা করে স্পষ্ট করে দিলেন, আগের মতো পরিস্থিতি এখনই হচ্ছে না। এতে মোর্চার সব দাপুটে নেতা এক হয়ে আগের মতো কলকাতা বা দিল্লিকে স্নায়ুর চাপে ফেলতে পারবেন না। পাহাড়ে একাধিক শক্তির ভরকেন্দ্র তৈরি হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন পাহাড়ের রাজনীতিকরা।