শতরূপার সঙ্গে মানস। নিজস্ব চিত্র
ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত দিদি চেয়েছিলেন, ভাই ডাক্তার হোক। বলেছিলেন, ‘‘তোকে ডাক্তার হতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে।’’ দিদি শতরূপার সে আশা পূরণ করে এমবিবিএস হলেন মানস রায়। শতরূপা অবশ্য আর নেই।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের রানিরহাটের বাসিন্দা রায় পরিবার। বাবা সুকুমার গৃহশিক্ষকতার পাশাপাশি, চাষের কাজ করেন। মা জয়শ্রী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে ৯৪%, ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০% নম্বর পান মানস। মাধ্যমিকে ব্লকে প্রথম হওয়ার পরে, মেখলিগঞ্জের তৎকালীন বিডিও সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ‘নিট’-এ ভাল ফল করে ভর্তি হন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এক সময়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে সমস্যায় পড়েন মানস। সেই সময়ে পাশে পান একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে শনিবার এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়েছেন মানস। এখন চলবে ‘ইন্টার্নশিপ’। সেই সঙ্গে প্রস্তুতি ‘নিট-পিজি’র।
মানস বলেন, ‘‘দিদিকে দেওয়া কথা রাখতে পেরেছি। দিদির কথা মতোই মানুষের পাশে থাকব। যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’’ মানসের বাবা বলেন, ‘‘২৪ বছরের মেয়েকে চোখের সামনে চলে যেতে দেখেছি। দেখেছি, চিকিৎসার খরচ। মেয়েকে দেওয়া কথা ছেলে রাখতে পেরেছে। ও মানুষের পাশে থাক, এটাই চাই।’’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কর্মকর্তা মৃন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন মানস। সহযোগিতা পেলে, গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও ভাল জায়গায় যেতে পারেন, সেটা উনি দেখিয়ে দিয়েছেন।’’
ছেলের সাফল্যে গর্বিত জয়শ্রী বলেন, ‘‘ওকে অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছি। ২০১৭ সালে ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই মেয়ের মৃত্যু হয়। তখন থেকেই ওর মধ্যে ডাক্তার হওয়ার জেদ চেপে যায়।’’
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোট থেকে মেধাবী মানস। আলোকঝাড়ি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ব্লকে প্রথম হন। এর পরে, ধূপগুড়ির বৈরাতিগুড়ি হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। দুই স্কুলের শিক্ষকেরাও পাশে ছিলেন এই পড়ুয়ার। আলোকঝাড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুবীর ঘোষ বলেন, ‘‘মানসের জন্য আমরা গর্বিত। ওকে দেখে, অন্যেরাও উৎসাহ পাবে।’’
মানস বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে এমডি করব, এখনও ভাবিনি। তবে ক্যানসার ও মেডিসিন নিয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে।’’