ডলি দাস। নিজস্ব চিত্র
প্রায় ষোলো বছর বয়েসে অপটু হাতেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল খিদিরপুরের প্রান্তিক মহিলা ডলি দাসকে। তাঁর স্বামী পুলক স্থানীয় হাটের ইজারাদার ছিলেন। আয় বলতে কিছুই ছিল না সংসারে। বুঝতে পারেন, আপ্রাণ লড়াই করেই টিকে থাকার রাস্তা তৈরি করতে হবে তাঁকে। একটি সেলাই মেশিন কেনার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সেই সময় ঋণ পাননি বলেই জানান তিনি। শেষে একটি গলার মালা বিক্রি করে মেশিন কেনেন। সেলাই থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর রাস্তার খোঁজ শুরু করেন তিনি। এখন ডলি আরও ২৫ জন মহিলার সহায়। স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে নানা সামগ্রী তৈরি করে জেলার বাইরের মেলাগুলিতে যান। তাঁর নিজের এবং গোষ্ঠীর অন্য মহিলাদের আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে বলেই জানান তিনি।
১৯৯৮ সালে ভাটপাড়া পঞ্চায়েতের অধীনে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির করার উদ্যোগ হচ্ছিল। তা জানতে পেরে সরকারি আধিকারিকদের কাছে গিয়ে খোঁজখবর নেন ডলি। তার পরে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ধীরে ধীরে সেলাই মেশিনের সাহায্যেই বাজারে হওয়া ঋণের টাকা শোধ করেন। ধীরে ধীরে মধ্য খিদিরপুর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাথা হন। মহিলাদের মধ্যে ভরসা আসে। তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা বেড়েছে বলেই জানান এলাকার কয়েকজন মহিলা। স্বনির্ভরতা প্রকল্পে আক্ষরিক অর্থেই ওই মহিলাদের আর্থিক উন্নতি এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার রাস্তা খুলে দেন ডলি।
পরে, উপ-সঙ্ঘ এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্ঘ তৈরি করে তুলাইপাঞ্জি, গোবিন্দভোগ চাল, আচার, পাঁপড় তৈরির কাজ সফল ভাবেই করে চলেছে তাঁদের গোষ্ঠী। বালুরঘাট মহিলা কলেজে তাঁরা একটি ক্যান্টিনও চালান গোষ্ঠীর মেয়েদের নিয়ে। ডলি বলেন, ‘‘কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। সেই সময় কী কষ্ট করতে হয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, তা আমিই জানি। এখন অনেকেই ভরসা করে যোগ দেন আমাদের সঙ্গে।’’ তিন ছেলেকে মানুষ করা, মাথার উপরে ছাদ তৈরি করা, ছেলেদের প্রতিষ্ঠা—সবই তাঁর চেষ্টাতেই হয়েছে বলে জানালেন ডলি। খিদিরপুরের মায়া বর্মণ, চায়না গোস্বামীদের মতো অনেক মহিলাকেই তিনি স্বনির্ভর হওয়ার রাস্তায় এক সঙ্গে নিয়ে চলতে পেরেছেন। চায়না বলেন, ‘‘দিন আনি দিন খাই সংসার আমাদের। ছোট কাজেও ঋণ ছাড়া, চলত না। ডলিদি আমাদের পাশে দাঁড়ানোর পরে এখন তা-ও দুটো পয়সা দেখতে পাই।’’
গোষ্ঠী পরিচালনার সুবাদে গ্রামীণ কর্মসংস্থানে নজর কাড়ার জন্য একাধিক পুরষ্কারও রয়েছে ডলির ঝুলিতে। নিজের কাজের সুবাদেই জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পরিচিতি ভাল। জেলার একাধিক আধিকারিক বিভিন্ন জেলায় মেলা হলে তাঁকেই জেলা থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেন বলেই জানিয়েছেন।